মেজর (অব:) মো. হানিফ
২১শে নভেম্বর আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক বাহিনী অতর্কিতে বাংগালীদের উপর জাপিয়ে পড়ে এবং নিশৃংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এমতাবস্থায় জাতি যখন কিংকর্তব্যবিমুঢ় তখন ৮ ম ইষ্ট বেংগলে কর্মরত মেজর জিয়াউর রহমান ( পরবর্তীতে লে: জেনারেল ও রাষ্ট্রপতি) কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পর বাংগালী সেনা সদস্য, পুলিশ, ইপিআর, ছাত্র, কৃষক, শ্রমসহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ২১ নভেম্বর তৎকালে পুর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর বাংগালী সদস্যগন ঐকবদ্ধ হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে এবং হানাদার বাহিনীর উপর সম্মিলিত আক্রমন রচনা করে। তৎপুর্বে ২৬শে মার্চ থেকেই এই তিন বাহিনী পৃথক পৃথক ভাবে পাক বাহিনীর সাথে লড়াই করে যাচ্ছিল।
সম্মিলিত এবং পরিকল্পিত যুদ্ধের জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ৩টি ব্রিগেড এবং ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল।
১) ‘জেড’ ফোর্স- মেজর ( পরবর্তীতে লেঃ জেনারেল) জিয়াউর রহমানের নামানুসারে ১,৩ ও ৮ ইষ্ট বেংগলকে নিয়ে ময়মনসিংহে এই ব্রিগেড গঠিত হয়।
২) ‘এস’ ফোর্স–মেজর ( পরবর্তীতে মেজর জেনারেল) শফিউল্লাহর নামে ২ ও ১১ ইষ্ট বেংগল সমন্বয়ে সিলেটে এই ব্রিগেড গঠন করা হয়।
৩) ‘কে’ ফোর্স– মেজর ( পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার এবং স্বঘোষিত মেজর জেনারেল) খালেদ মোশাররফ এর নামানুসারে ৪, ৯ ও ১০ ইষ্ট বেংগলকে নিয়ে এই ব্রিগেড গঠিত হয়।
উপরোক্ত ব্রিগেড সমুহের কমান্ডে দেশের সর্বত্র একযোগে কার্যকরী অপারেশন পরিচালনার লক্ষ্যে রণকৌশল হিসাবে দেশের ভৌগোলিক এলাকাকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়ঃ
১ নং সেক্টরঃ – পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা। সেক্টর কমান্ডার- মেজর জিয়াউর রহমান।
২ নং সেক্টর ঃ ঢাকা দক্ষিন এলাকা। সেক্টর কমান্ডার -মেজর খালেদ এবং পরে মেজর হায়দার।
৩ নং সেক্টর ঃ ঢাকা উত্তর এলাকা। সেক্টর কমান্ডার – মেজর শফিউল্লাহ পরবর্তীতে মেজর নুরুজ্জামান।
৪ নং সেক্টর ঃ সিলেট দক্ষিন এলাকা। সেক্টর কমান্ডার – মেজর সি আর দত্ত।
৫ নং সেক্টরঃ সিলেট উত্তর এলাকা। সেক্টর কমান্ডার মেজর মীর শওকত।
৬ নং সেক্টরঃ – রংপুর এলাকা। সেক্টর কমান্ডার – উইং কমান্ডার বাশার।
৭ নং সেক্টরঃ- রাজশাহী এলাকা। সেক্টর কমান্ডার – মেজর নুরুজ্জামান।
৮ নং সেক্টরঃ – যশোর এলাকা। সেক্টর কমান্ডার – মেজর আবু ওসমান। পরবর্তীতে মেজর মঞ্জুর।
৯ নং সেক্টরঃ- খুলনা এলাকা। সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল। পরবর্তীতে মেজর জয়নাল আবেদীন।
১০ নং সেক্টরঃ- বরিশাল এলাকা। সেক্টর কমান্ডার – মেজর রফিক।
১১ নং সেক্টরঃ- ময়মনসিংহ এলাকা। সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহের।
আজকের এই সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এবং চাকুরীরত সকল সদস্যকে আন্তরিক অভিবাদন জানাচ্ছি। সশস্ত্র বাহিনীর যে সকল সদস্য দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করতঃ পরলোকগমন করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক সদস্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি: