
মাসুম হোসেন অন্তু, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : গবাদীপশু লালন-পালনে মিরাক্কেল প্রযুক্তি হলো সাইলেজ। সাইলেজ হলো যে কোন সবুজ ঘাসকে প্রক্রিয়াজাত করে বায়ুশুন্য জায়গায় গাজন করে রেখে তার এক মাস পর গবাদীপশুকে খাওয়ালেই সেটি হবে সাইলেজ।
তবে উৎকৃষ্ট মানের হয় ভুট্রার সাইলেজ। ভুট্রা ভাংগানোর পর লালী গুড় ও লাইম স্টোন পাউডার মিশিয়ে তৈরি হয় সাইলেজ। গো-খাদ্যের অতিরিক্ত দামের কারণে গবাদীপশু লালন-পালন করে লোকসানে পড়তে হচ্ছে গো-খামারিদের। বাজারে প্রতি কেজি ভূষি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা দরে। আর ভুট্রার সাইলেজ ১০-১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২ কেজি সাইলেজ ১ কেজি ভূষির কাজ করে। ভূষির থেকেও ভুট্রার সাইলেজে প্রোটিন বেশি।
সিরজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার চর-বাশুরিয়া মাঠে কথা হয় ভুট্রার সাইলেজ প্রস্তুতকারী শ্রী সুধাংশু কুমার রায়ের সাথে তিনি বলেন, প্রতি বিঘা ভুট্টা গাছের দাম ৩০-৩৫ হাজার টাকা ক্রয় করে কৃষকের ক্ষেতেই সাইলেজ তৈরি করছি। প্রতি বিঘায় ৫০ কেজির ১০০-১১০ বস্তা সাইলেজ হয়। বাজারে প্রতি কেজি সাইলেজ ১০-১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভুট্রা ভাংগানোর পর সাইলেজের কাচামাল হিসেবে মিশ্রিত হয় লালী গুড় ও লাইম স্টোন পাউডার। ভুট্টার সাইলেজে অধিক পরিমাণে প্রেটিন থাকায় গো-খাদ্যের জন্য এটা উপযোগী। ভুট্রার সাইলেজ এক-দেড় বছর সংরক্ষণ করে রাখালেও গবাদীপশুর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না বলে দাবী করেন তিনি।
গবাদীপশুকে সাইলেজ খাওয়াতে অভ্যস্ত করলে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। খর না দিলেই চলে, যেখানে ভুষি ৫ কেজি লাগে, সেখানে সাইলেজ ২-৩ কেজি দিলেই গরুর খাদ্যের চাহিদা পুরণ হচ্ছে। গবাদিপশুকে সবুজ ঘাস খাওয়ালে দুধ উৎপাদন বেশি হয়, গো-মাংসের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। আবার বন্যার সময় কাচা ঘাসের অভাবে দুধ কুমে যায়। বর্ষার মৌসুমে সাইলেজ খাওয়ালে গাভীর দুধ আগের মতই হয়।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মো. বিল্লাল হোসেন জানান- এ অঞ্চল বন্যা প্রবণ এলাকা হওয়ায় চার মাস ঘাসের জমি পানির নিচে থাকে। ফলে সবুজ ঘাসের অভাবে ভুষির দোকানে অনেক টাকা বাকী হয়ে যায় গো-খামারীদের। পরে গরু বিক্রি করে ঐ দোকানের বাকী টাকা পরিশেধ করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে গবাদীপশুকে সাইলেজ খাওয়ালে দুধের উৎপাদন বেড়ে যায়, গরু হৃষ্টপুষ্ট হয়। দুধ বিক্রির টাকা দিয়েই ভূষির দোকানের বাকী টাকা পরিশোধ করতে পারবে গো-খামারীরা। তাদের গরু বিক্রি করে আর হালখাতা খাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
তিনি আরো বলেন, আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে গবাদীপশুকে সাইলেজ খাওয়ায়ে খুব সহজেই হৃষ্টপুষ্ট করতে পারবে। এ উপজেলায় প্রায় ৩ লক্ষ ৮২ হাজার গাভী, ষাঁড় ও বাছুর রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০-৮০ হাজার গরু হৃষ্টপুষ্ট করে বিভিন্ন গো-খামারীরা। তারাও যেন অল্প খরচে গবাদীপশু হৃষ্টপুষ্ট করতে পারে সেজন্য আমরা গো-খামারীদের উদ্ভুদ্ধ ও পরামর্শ দিচ্ছি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের একটি প্রাণিপুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে গো-খামারীদেরকে বিনামূল্যে সাইলেজ সরবারহ করছি। খামারীরা তাদের পালিত গবাদীপশুকে সাইলেজ খাওয়াতে অভ্যস্ত করতে পারে। সাইলেজে খরচ কম, উৎপাদন বেশি। সাইলেজ খাওয়ালে গাভীর দুধ বাড়ে আবার ষাঁড় গরু হৃষ্টপুষ্ট করার মাধ্যমে অধিক মাংস উৎপাদন করা সম্ভব। সাইলেজ গরুকে খাওয়ালে খুব দ্রুত হৃষ্টপুষ্ট হয়। এতে খরচ কম, এ সাইলেজটি হলো যুগোপযোগী প্রযুক্তি। গবাদীপশু সাইলেজ খাওয়া অভ্যস্ত হয়ে গেলে শুধু এ উপজেলাই নয় সারা দেশেই গবাদীপশু লালন-পালনে নাটকীয় পরিবর্তন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।