দৃশ্যপট ডেস্ক:
ফুলজোড় নদীর কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা রায়গঞ্জ উপজেলার তেলিজানা আশ্রয়ণ প্রকল্প এখানেই বসবাস করছে এক ভিন্ন জগতের মানুষ। সমাজ যাদের অবহেলা করেছে, উপহাস করেছে, সেই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো আজও মরিয়া হয়ে খুঁজছে বেঁচে থাকার একটুখানি সম্মান।
তাদের ঘরে অভাব, দুঃখ আর বঞ্চনার গল্প যতটা প্রকট, ততটাই উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছে এক শিশুর স্বপ্ন ১০ বছরের আশিকের স্বপ্ন।
আশিকের মা আশা হিজড়া (৪০) অনেক কষ্টে একটি শিশুকে নিজের কোলে এনেছেন। অন্যদের মতো তিনি চাননি কেবল করুণার ভাতায় বাঁচতে। তিনি চেয়েছেন সন্তানকে মানুষ করতে। তাই দিন-রাতের কষ্ট সহ্য করে আশিককে ভর্তি করেছেন স্থানীয় নূরানী মডেল মাদ্রাসায়।
আশা হিজড়া কণ্ঠ রুদ্ধ করে বললেন,আমারও তো স্বপ্ন ছিল, একদিন মা হয়ে সন্তানের হাত ধরে তাকে স্কুলে নিয়ে যাবো। অনেক কষ্টে আশিককে লালন করছি। চাই সে পড়াশোনা করে মানুষ হোক। কিন্তু সংসার চালানোই যখন কষ্টকর, তখন তার স্বপ্ন পূরণ করা কি এত সহজ?কষ্ট যতই হোক, আমার ছেলে পড়াশোনা করবে। হয়তো একদিন সে-ই প্রমাণ করবে, হিজড়া ঘরেও আলো জ্বলে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের হিজড়া কমিউনিটির নেত্রী রুপা হিজড়া (৪৫) জানালেন, এখানে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১৯টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘর পেলেও জীবনের কষ্ট শেষ হয়নি।আমরা বিয়ে বাড়িতে গিয়ে নাচ করি, সন্তান জন্মালে আশীর্বাদ করি। কেউ ২০০ টাকা দেয়, কেউ ৫০০, কেউবা ১০০০ টাকা দেয়। অনেক সময় বাজারে গিয়ে হাত পাততে হয়। সরকারের যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকতো, আমরা মানুষের মতো বাঁচতে পারতাম।
প্রকল্পের পাশের সাধারণ বাসিন্দা মো. লিটন শেখও স্বীকার করলেন, তারা পাশাপাশি বসবাস করলেও সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা এখনও অবহেলার শিকার।আসলে তাদেরও স্বপ্ন আছে, তারা মানুষ হিসেবেই বাঁচতে চায়। কিন্তু সমাজের চোখে তারা আজও বোঝা।
তবে আশার কথা শোনালেন রায়গঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির। তিনি বলেন,আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বাস করছেন, তাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। টেকসই কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু সরকারি উদ্যোগের ধীর গতির মাঝেই রোজকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রুপা, আশা কিংবা অন্যরা।
রোদে-ঝড়ে, উপহাস আর অভাবের মাঝেও তেলিজানা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছোট্ট ঘরে আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে আশিক।
তার মায়ের মতো হয়তো আরও অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন,একদিন এই শিশুর মতোই তারা সমাজের চোখে শুধু তৃতীয় লিঙ্গ নয়, বরং মানুষ হয়ে উঠবেন।