রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের জয়সাগর দিঘীর পাড়ের মৃত মন্তাজ আলী মন্ডলের ছেলে মো. আব্দুল জলিল (৮০), এলাকার সবার কাছে “জলিল মাইক” নামে পরিচিত। মৃত্যুসংবাদ বা ধর্মীয় জালসার খবর ছড়িয়ে দেওয়াই তার পেশা। যখন কেউ মারা যান, তখন শোকাহত মানুষের কানে ভেসে আসে তার কণ্ঠ-“আসসালামু আলাইকুম… একটি শোক সংবাদ…”এরপরই ঘোষণা করেন জানাজা ও দাফনের সময়-তারিখ।
এক সময় গ্রামের পর গ্রাম সাইকেলে আইসক্রিম বিক্রি করতেন জলিল ভাই। এক জানাজায় গিয়ে দেখেন মানুষ কম উপস্থিত হচ্ছে, তখনই সিদ্ধান্ত নেন মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার এই কাজ করবেন। প্রায় ২৮-৩০ বছর ধরে এই কাজই করে আসছেন তিনি।
জীবনের একমাত্র আয়ের উৎস এই মাইকিং। জলিল ভাই নিজের সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন আল্লাহর ভরসায়। প্রচারণা শেষে মানুষ যা দেন, ( প্রকাশ করতে চান না) সেটিতেই সন্তুষ্ট থেকে বলেন“আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করি। যা পাই, তাতেই খুশি। নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক চাই না। আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন এটাই চাই।”
প্রথমে মোটরসাইকেলে দুই পাশে ব্যাটারি আর ২ দিকে দুইটি মাইক বসিয়ে প্রচার শুরু করেন। শুরুতে মানুষ হাসাহাসি করলেও এখন তার মাইকের আওয়াজ রায়গঞ্জবাসীর নির্ভরতার প্রতীক। দিন-রাত, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এক ফোনেই ছুটে যান খবর ছড়াতে। নিজের মোবাইলে বার্তা রেকর্ড করে মাইকে সম্প্রচার করেন।
গানবাজনা বা রাজনৈতিক প্রচারণার প্রস্তাব এলেও তিনি বলেন“গান বা রাজনীতি প্রচার করি না। শুধু মৃত্যুসংবাদ, ধর্মীয় সংবাদ আর সরকারি বিজ্ঞপ্তিই মাইকিং করি।”
মৃত্যুসংবাদের পাশাপাশি ইসলামী মাহফিলের খবরও পৌঁছে দেন তিনি। মাহফিলের মৌসুমে ব্যস্ততা বেড়ে যায়, কখনো কখনো অনুষ্ঠান শেষে নিজেও উপস্থিত থাকেন। তার প্রচারণার কারণে অনেকেই সময়মতো জানাজায় এসে প্রিয়জনের শেষ বিদায় জানাতে পারেন।
জলিল ভাই জানান, এখনো ইচ্ছে আছে যতদিন সম্ভব এই সেবামূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যেন সুস্থ থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন।
“সোনা খাড়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউ পি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ছোট কাল থেকেই দেখছি জলিল ভাইয়ের মাইক দিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করা, এখন তিনি মটর সাইকেলে করে মৃত্যু সংবাদ ও জালসার প্রচার করেন”।
রায়গঞ্জে একমাত্র ভরসার নাম “জলিল মাইক”—যিনি মানুষের মৃত্যুবার্তা পৌঁছে দিয়ে শেষ বিদায়ের সুযোগ করে দেন বিনিময়ে কোনো লোভ ছাড়াই, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়।