মাহাবুল ইসলাম, মেহেরপুর প্রতিনিধি:
কোনো কোনো ধান ক্ষেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধকল্পে এখনও কীটনাশক স্প্রে করা হলেও সারাদেশের ন্যায় মেহেরপুরের অধিকাংশ এলাকায় চলছে ধান কাটামাড়াইয়ের কাজ। রোদ-গরম উপেক্ষা করে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ধানের আটি বাঁধা, পালা কিংবা হাঙ্গা দেওয়া নিয়ে। কেউ কেউ ধান কর্তনের পর মাড়াইয়ের পূর্বে শুকানো নিয়েও ব্যস্ত রয়েছেন। কারণ গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কিছু জমির ধান ভিজে গেছে।
শনিবার (৩ মে), সকাল থেকে বিকেল অবধি মেহেরপুরের বল্লভপুর, বাগোয়ান, রামনগর, ভবানীপর, বিশ্বনাথপুর, শিবপুর, টেংরামারী, ভবানন্দপুর, আশরাফপুর, সোনাপুর, বলিয়ারপুর, হরিরামপুর, আমঝুপি, আযান, মটমুড়া, জোড়পুকুরিয়া, ধানখোলা, গাঁড়াডোব, সাহারবাটী ও মাইলমারীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে মেলে। আগাম আবাদকৃত ধান কর্তন শুরু হলেও কর্তনের জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে (নামলা) এমন জমির পরিমাণও কিন্তু কম নয়।
আযান গ্রামের কৃষক তৌহিদুল জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ধান ভিজে গেছে যা ক্ষেতের পানি শুকিয়ে গেলেও এখনো ভেজা রয়েছে কর্তনকৃত ধান। এগুলো শুকাতে রোদে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে শুকানো হচ্ছে।
বিঘা প্রতি জমিতে ১৯/১২ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৩০ মণ ফলন পাওয়া সম্ভব বলে আশাবাদী তিনি।
একই গ্রামের হৃদয় খান জানান, পোকামাকড় দমনে ইতিপূর্বে কীটনাশক স্প্রে করা হলেও শেষবারের মতো আরও একবার স্প্রে করা হচ্ছে।
বল্লভপুরের দিলিপ জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। সার, সেচ, কীটনাশক মিলে বেশ কিছু টাকা খরচ হয়েছে। নিজেই পরিশ্রম করে থাকেন সেক্ষেত্রে ধান চাষ লাভজনক হবে তিনার জন্য।
অপর এক কৃষক জানান, প্রতি বছরে বিঘা প্রতি জমি বর্গা নিতে ৪০ হাজার টাকা গুনতে হয়। আর সেচের জন্য গুনতে হয় ৫ হাজার টাকা। যদিও বছরে ৩ বার ধানের আবাদ করা হয় কিন্তু সার ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধিতে তেমন একটা লাভবান হওয়া সম্ভব না।
ভৈগীরচারা মাঠে কথা হলে বিশ্রাম নামক একজন জানান, ইতিপূর্বে ধান চাষে তেমন একটা লাভ না হলেও এখন কিছুটা লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগ থেকে কোনরকম পরামর্শ ও সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
এদিকে এসব ধান কর্তনে বিঘা প্রতি জমিতে ৫ জন শ্রমিকের দরকার হয় এবং মজুরী নেওয়া হয়ে থাকে ৭’শ টাকা বলে মুজিবনগর এলাকার কয়েকজন শ্রমিকের সাথে আলাপকালে জানা যায়। তবে এলাকাভেদে কিছুটা তারতম্য রয়েছে। মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মজুরি ৫/৬’শ টাকা নেওয়া হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও বিঘা চুক্তিতেও ধান কর্তন করা হয়ে থাকে। ধান কর্তনে প্রতি দলে ১৮/২০ জন সদস্য থাকে।
এরা মূলত: ধান কর্তন, আটি বাঁধা, বহন করে থাকে। শুকনা এলাকায় ট্রাক্টর, ট্রলি, আলগামনসহ অন্যান্য যানবাহনে ধান বহন করা হয়ে থাকে। মাড়াই কাজ মেশিনে হয়।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, এবছরে মেহেরপুরের সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাগণ কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।