নিজস্ব প্রিতেবদক:
জমি কেনাবেচা সংক্রান্ত একটি প্রতারণার মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পরও স্ব-পদে বহাল রয়েছেন সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘেরর পরিদর্শক (শহর) মো. গোলবার হোসেন অনন্ত। প্রতারণার ওই মামলার ২ নম্বর আসামী গুলবার হোসেন অনন্তের
স্ত্রী আল্পনা পারভীন বেলী জেলহাজতে গেলেও তিনি নিজে এখনো অধরা রয়ে গেছেন। অপরদিকে গোলবার হোসেন অনন্তের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামী হওয়ার পৌর গুলবার হোসেন অনন্ত সরকারি চাকরিতে কিভাবে বহাল রয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাদী।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গোলবার হোসেন অনন্ত ২০২০ সালে রায়গঞ্জ উপজেলার ইচলািদগর মৌজার বেশ কিছু জমি বিক্রির প্রস্তাব দেন সিরাজগঞ্জ শহরের একডালা মহল্লার বাসিন্দা গৌর চন্দ্র রায়কে। গৌর চন্দ্র রায় ওই জমি কিনতে রাজি হলে উভয় পক্ষের সম্মতিতে ৭৬ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি গোলবার হোসেন অনন্ত গংকে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে জমির বায়না রেজিস্ট্রি করেন গৌর চন্দ্র রায়। কিন্তু ওই বছর দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দলিল সম্পাদন বন্ধ থাকে। রেজিস্ট্রি বায়না হওয়ার পর ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর শওকত হোসেন সেলিম নামের একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আরো ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন গৌর চন্দ্র রায়।
২০২১ সালের ১৯ জুলাই মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিরাজগঞ্জ শাখার নিজ একাউন্ট থেকে গোলবার হোসেন অনন্তের অ্যাকাউন্টে আরো দশ লাখ টাকা দেন গৌর চন্দ্র। সব মিলিয়ে জমি বাবদ মোট সাত লাখ টাকা গোলবার হোসেন অনন্তকে বুঝিয়ে দেন গৌর।
পরবর্তীতে গৌর চন্দ্র জমির বাকি ১৬ লাখ টাকা দিয়ে দলিল করে দিতে বললে গোলবার হোসেন অনন্ত জানায় জমি নিয়ে মামলা রয়েছে। মামলার শেষ হলে তিনি জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে চান।
এরপর ওই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরও গোলবার হোসেন ও তার সহেযাগীরা জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মুরুব্বিরা একাধিকবার সালিশি বৈঠক করলেও বিচারের রায় মানেননি গোলবার হোসেন অনন্ত গং।
২০২৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর সকালে গৌরচন্দ্র ১৬ লাখ টাকা নিয়ে গোলবার হোসেন অনন্তের বাড়ি যান এবং জমি দলিল করে দিতে বলেন। এসময় গোলবার হোসেন ও তার লোকজন গৌর চন্দ্রের সাথে মার মুখে আচরণ করেন এবং বলেন জমি আর টাকা কোনটাই ফেরত দেওয়া হবে না।
টাকা ফেরত না পেয়ে ২০২৩ সােলর ২৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী গৌর চন্দ্র রায় পাদি হয়ে তিনজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ মামলার তদন্ত শেষে গুলবার হোসেন অনন্ত ও তার স্ত্রী আলপনা পারভিন বেলিকে অভিযুক্ত করে গত ২ মার্চ আদালতে চার্জশিট দেন। মামলার তৃতীয় আসামি নুরুন্নবী সরকারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে গৌর চন্দ্র রায় বলেন, জমি বাবদ ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে ৬০ লাখ টাকা গোলবারকে দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা নিয়ে আমি অনেক ঘুরেছি। জমি দলিল করে দিতে বলেছি। কিন্তু গোলবার হোসেন অনন্ত জমির দলিল করে না দিয়ে আমাকে হুমকি ধামকি দিয়েছেন। তিনি জমি বা টাকা কিছুই ফেরত দিচ্ছেন না।
একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি আমার সাথে প্রতারণা করেছেন। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করেছি। পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে। তারপরেও সরকারি চাকরিতে তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সাইফুল ইসলাম বলেন গৌড় চন্দ্র রায়ের দায়ের করা প্রতারণার মামলাটি তদন্তের পর গত ২ মার্চ আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘর এর সহকারি পোস্টমাস্টার জেনারেল আল আমিন বলেন, মৌখিকভাবে তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি শুনেছি। তবে অফিসিয়াল কোন কাগজপত্র পাই নাই। অফিসিয়ালি কাগজপত্র পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।