দৃশ্যপট প্রতিবেদক
একটি কোম্পানীর লাভজনক ব্যবসায় শেয়ারের নামে চার কৃষকের কাছ থেকে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ফজলুল হক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ওই টাকা ফেরত চাওয়ায় ভুক্তভোগীদের মিথ্যা অপহরণ মামলায় ফাঁসিয়ে জেলহাজতও খাটানো হয়।
অর্থ আত্মসাতকারী ফজলুল হক সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা থানার পাঁচলিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। ভুক্তভোগীরা হলেন, সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের শাহ কামালের ছেলে মিলন, একই ইউনিয়নের আগবয়রা গ্রামে মনিরুল ইসলাম, বাগবাটি ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর মনজুরুল হক ও শ্যামপুর গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে আশরাফুল আলম।
ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মিলনের মাধ্যমে তার ভায়রা ফজলুল হকের সাথে পরিচয় হয় আমাদের। ২০২১ সালে মার্চ মাসে ফজলুল হক এস প্লাস কোম্পানীর লাভজনক ব্যবসার কথা বলে শেয়ারের প্রস্তাব দেয়। কৌশলে ফজলুল হক ও মিলন আমাদেরকে শেয়ার নিতে উৎসাহিত করে। তারা মোটা অংকের লাভের প্রস্তাব দিলে আমরা চারজন মিলে কয়েক কিস্তিতে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেই। টাকা নেওয়ার পর এক লাখ টাকা লভ্যাংশও দেন ফজলুল হক। এর পর লাভের টাকা চাইলে আজ-কাল করে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। এ অবস্থায় করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকায় সেই অজুহাত দেখিয়ে তিন বছর পার হয়ে যায়। কিন্তু ফজলুল হক কোন টাকা ফেরত দেয় না।
মনিরুল বলেন, আমি সফল চাতাল ব্যবসায়ী হিসাবে বিভিন্ন জেলায় ধান চাল সরবরাহকারী ছিলাম। ব্যবসার টাকা থেকে ফজলুল হককে দফায় দফায় ৬০ লাখ টাকা দিয়েছি। সবাই জমি ও গরু বিক্রির টাকা কেউ কেউ ঋণ করে ফজলুল হককে টাকা দিয়েছে। সরল বিশ্বাসে কোন প্রকার ডিড ডকুমেন্টস ছাড়া টাকা দিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। টাকা ফেরত না পেয়ে আমার সবাই সর্বশান্ত হয়ে অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছি।
গত ২৫ অক্টোবর আমরা টাকা চাইতে পাঁচলিয়া প্রতারক ফজলুল হকের বাড়ীতে যাই। সেখানে ভুক্তভোগী মিলন তার বাবা আয়নাল, মনজু মেম্বার, হযরত আলী,বাবুল আক্তার , আশরাফুল ইসলাম বাবু মিলে পাঁচলিয়া বাজারে টাকার তাগাদা দেই। ফজলুল হক আমাদের দেখে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। এরই মধ্যে সলঙ্গা থানায় খবর দিয়ে পুলিশ নিয়ে এসে বলে আমরা ফজলুলকে অপহরণ করতে এসেছি মর্মে পুলিশ আমাদের আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে আমাদের টাকার বিযয়টি ধামাচাপা দিতে গত ১২ নভেম্বর ফজলুল হকের স্ত্রী রাবেয়াকে বাদী করে উল্লাপাড়া থানায় আরও একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
ভুক্তভোগীরা বলেন, ফজলুল হক নিজের ভাই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরী করেন এমন কথা বলে আমাদের শেয়ারের টাকা দিতে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমার ভাই বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা তৈরি করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফজলুল হকের ভায়রা মিলন বলেন, আমার ভায়ড়া ফজলুল হক বলেছিলেন যতটুকু ক্ষতি করে টাকা দিবেন তার চেয়ে তিনগুন টাকা ফেরত পাবেন। আপনজন হয়ে এত বড় ক্ষতি করবে জীবনে ভাবতে পারি নাই। আমি ফসলি জমি বিক্রি ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আমার কাছ থেকে নিয়েছে।
সাবেক ইউপি সদস্য মনজুরুল হক বলেন, কয়েক কিস্তিতে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছি। খামারের গরু বিক্রি ও প্রতিবেশী এক গৃহবধুর নিকট থেকে হাওলাদ করে টাকাগুলো দিয়েছিলাম। আমি এখন নি:স্ব হয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।
এ বিষয়ে জানতে প্রতারক ফজলুল হকের মোবাইলে বার বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।