রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় ফুলজোড় নদীর ওপর প্রায় ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার ব্রিজ নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে আছে। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও স্থানীয় একটি বসতবাড়ি উচ্ছেদ না হওয়া।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, নওদাশালুয়া থেকে সাহেবগঞ্জ বাজার পর্যন্ত প্রায় ৭১০০ মিটার চেইনেজ এলাকায় ৩০০.৪০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০২৪ সালের ১৫ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোস্তফা কামাল, নিয়াজ পার্ক, কাউতালি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
প্রকল্প শুরু হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৩টি পিলারের কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি পিলারের ৩৫০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা পরীক্ষার জন্য বালুভর্তি বস্তা দিয়ে লোড টেস্ট চালানো হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পশ্চিম পাশে ব্রিজের মুখে আমির হোসেন নামে এক ব্যক্তির বসতবাড়ি থাকায় প্রায় ৬ মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি তার তিন ছেলেকে নিয়ে এ বাড়িতে বসবাস করছেন।
এলজিইডির পক্ষ থেকে বসতবাড়িটি উচ্ছেদ ও জমি অধিগ্রহণের জন্য একাধিকবার প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়।
২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে উপসচিব বরাবর আবেদন করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পরে ২১ জুলাই ২০২৫ তারিখে স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামীম ব্যাপারী নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজগঞ্জকে জমি অধিগ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেন।
নির্দেশনার পর নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউর রহমান ৭ আগস্ট ২০২৫ তারিখে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করার অনুরোধ করেন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নথি অনুযায়ী চর ফরিদপুর মৌজায় ০.৯২১২ একর জমি দাদপুর মৌজায় ০.৭৫৬৮ একর জমি মোট ১.৬৭৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। এর মধ্যে চর ফরিদপুর মৌজার ১৯ নং দাগে থাকা ৯ শতক জায়গায় আমির হোসেনের বাড়ি রয়েছে, যা ব্রিজের কাজে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চর ফরিদপুর আদর্শ গ্রামের শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন,আমরা বহুদিন ধরে এই ব্রিজের অপেক্ষায় আছি। কাজ শুরু হলেও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে হতাশা বাড়ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান চাই।
আমির হোসেন বলেন, যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিলে আমি জায়গা ছেড়ে দেব। সরকার চাইলে আমরা সহযোগিতা করব, কিন্তু ন্যায্য মূল্য না পেলে বাড়ি ছাড়তে পারব না।
রায়গঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল আলম বলেন,ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে আমরা পত্র পেয়েছি। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ভূমি অধিগ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন হলে স্থবিরতা কাটিয়ে ব্রিজ নির্মাণকাজ আবারও গতি পাবে।
স্থানীয়রা বলছেন, ব্রিজটি চালু হলে রায়গঞ্জ ও আশপাশের হাজারো মানুষ উপকৃত হবেন। কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ হবে, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষের যাতায়াত খরচ ও সময় কমে আসবে।