নওগাঁ প্রতিনিধি:
পরিবারের উপার্জনক্ষম একজন ব্যক্তিকে এখন ভাবতে হয় নিত্যদিনের বাজারের টাকা কিভাবে রোজগার করা যায়। বাজারে গিয়ে তাকাতে হচ্ছে পকেটে রাখা টাকার দিকে। এরপর দাম শুনে কুঁচকে ওঠে অনেকে, কেউ আবার দাম শুনে চলে আসছে। এমনই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বর্তমানের চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামের কারণে। দিনদিন বেড়েই চলেছে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম।
শস্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁয় আবারো বেড়েছে চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে সবধরণের চালের দাম কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা বেড়েছে। এতে ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ৫০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত। পাইকারিতে চালের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তবে খুচরা পর্যায়ে সরু চালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে এক টাকা। চালের দাম বাড়ায় চালকল বিড়ম্বনায় পড়েছে ভোক্তারা।
নওগাঁ পাইকারি মোকাম সূত্রে জানা যায়- কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৯ টাকা কেজি। আগে ছিল ৬৫-৬৮ টাকা। জিরাইশাইল বর্তমানে ৬৫-৬৭ টাকা হলেও আগে ছিল ৬৪-৬৬ টাকা। মোটা জাতের চাল ব্রি-২৮ বিকি বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৫৯ টাকায়। আগে ছিল ৫৬-৫৮ টাকা। এছাড়া পারিজা ও স্বর্ণা-৫ চাল বর্তমানে ৫৬-৫৮ টাকা কেজি হলেও আগে ছিল ৫৫-৫৭ টাকা। তবে পৌর খুচরা চাল বাজারে সরু চাল সরু চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। কাটারিভোগ ৭০-৭২ টাকা, জিরাশাইল ৬৫-৬৬ টাকা ও সুফলতা ৬০-৬২ টাকা। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১ টাকা। ব্রি-২৮, স্বর্ণা-৫ ও পারিজা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকা। বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোন চাল মিলছে না।
শুধু চাল না, নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর দামই বেড়েছে। বাজারে ৫০-৬০ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি মিলছে না। সবকিছুর দামই ঊর্ধ্বগতি। এতে করে নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে দিনমজুরদের সমস্যা বেড়েছে। তাদের আয়ের ব্যয় মিলাতে পারছে না। আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় বাজারে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজারে নিয়মিত প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করে ক্রয়-বিক্রয় রশিদ তদারকি করা হচ্ছে। যেসব দোকানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হয়নি তাদের নামমাত্র জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু জরিমানা করা হলেও তেমন কোন সুফল মিলছে না।
ভোক্তাদের অভিযোগ- চালকল মালিক ও ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট করে মজুত গড়ে তুলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পরে দাম বাড়লে তারাই লাভবান হন। এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার।
খুচরা চাল ব্যবসায়িদের অভিযোগ- ঘুরে ফিরে প্রশাসন খুচরা চাল বাজারে এসে অভিযান পরিচালনা করে। রোববার এক খুচরা ব্যবসায়ির মুল্য তালিকা না থাকায় ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অথচ এই টাকা তার প্রায় ৪-৫ দিনে আয় করতে হবে। খুচরা ব্যবসায়িদের মুলধন প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা। অথচ চালের পাইকারি আড়তে তাদের কোন ভ্রæক্ষেপ নেই। তারা লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করছে। তাদের মোকামে ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়ায়।
রাণীনগরের অটোচালক তপন সরকার, দিনমজুর বিপ্লবসহ অনেকেই মুখে বিষন্নতার ছাপ নিয়ে বলেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এখন ভাবতে হয়, যেন পরিবারের জন্য দিনের বাজার কিনে বাড়িতে আসতে পারি। খুব ভয় হয় বাজারে গিয়ে জিনিসের দাম শুনতে।
দুর্গাপুর গ্রামের ভ্যানচালক মোবারক আলী বলেন- পরিবারের সদস্য ৬জন। দিনে দেড় কেজি চাল লাগে। আগে ব্রি-২৮ চাল ৫৬ টাকা কেজি কিনেছিলাম। এখন ৫৮ টাকা কেজি কিনতে হলো। এছাড়া সবজির দামও বেশি। দিনে ৫০০-৬০০ টাকা যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
নওগাঁ পৌর খুচরা বাজারের চাল ব্যবসায়ি কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন- সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১ টাকা। তবে সরু চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে ক্রেতা শূণ্য হওয়ায় বেচাকেনা একেবারে নেই বললেই চলে। দফায় দফায় চালের দাম যেভাবে বাড়ছে এতে ক্রেতারাও বিপাকে পড়েছে।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, কয়েকদিন আগে সারাদেশের ন্যায় নওগাঁর ওপর দিয়ে বৈরি আবহাওয়া বয়ে যায়। এতে করে চালকলের চালাতে থাকা ধান শুকানো সম্ভব হয়নি। অনেক ধান চালাতে পড়ে থাকায় নষ্ট হয়েছে। এছাড়া বাজারে ধানের দাম উর্ধ্বগতি। ধানের দাম বেশি হওয়ায় চাল উৎপাদন করতে খরচও বেশি পড়ছে। এ দুইয়ের প্রভাবে চালের দাম কেজিতে এক টাকা থেকে দেড় টাকা বেড়েছে। তবে আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলে দাম কমার সম্ভবনা রয়েছে।