মেহেরপুর প্রতিনিধি:
মেহেরপুরের গাংনীতে জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছৈফতুল্লাহ (৬০) নামের একজনকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপ মেরে আহত করার অভিযোগ। যার পরিপ্রেক্ষিতে সিরাজুল ইসলাম (৬৫) নামের একজনের বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাংচুর এবং ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে।
শনিবার (৩ মে), সকাল ৭ টার দিকে গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের মহাম্মদপুর গ্রামের পূর্বপাড়াতে এ ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানায়, সকালে সিরাজুল ইসলাম হাঁসুয়া নিয়ে মাঠে যেতে ডাকু মিয়ার দোকানের সামনে গেলে ছৈফতুল্লাহ তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে সিরাজুলকে মারধর করলে সিরাজুল তার হাতে থাকা হাঁসুয়া দিয়ে ছৈফতুল্লাহর মাথায় কোপ মেরে আহত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছৈফতুল্লাহর ভাই ও ভাতিজাসহ ২০/৩০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র রামদা, ছোরা, হাতুড়ি, লাঠি, ফলা, নিড়ানি ও দাসা নিয়ে সিরাজুলের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় বাড়িঘরের বিভিন্ন অংশ ভাঙা, ফ্রিজ, মটর, আলমারি, খাট, গ্যাসের চুলা, টিউবওয়েল, ঘরের ফ্যান, মটরসহ আসবাবপত্র এমনকি রান্নার চুলা, হাড়ী পাতিলও ভেঙে দেয়। এসময় সংঘবদ্ধ দলটি ঘরের বাক্সে থাকা সিরাজুলের ছেলের বউদের ১০ ভরি স্বর্ণ, তামাক বিক্রির ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা, ৪ ব্যারেল গম, ২ বস্তা চাল, ভুট্টা, ধান, রসুন ৮ টি ছাগল, ৫ বেল তামাক ও ২৫ মণ বস্তা ভর্তি হলুদ লুটপাট করে ভ্যানযোগে নিয়ে যায়। এহেন ভীতিকর ঘটনা দেখে সিরাজুলের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে হাঁসুয়ার কোপে আহত হওয়ায় ছৈফতুল্লাহকেও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্র জানায়।
ছৈফতুল্লাহ খারাপ প্রকৃতির লোক ও প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বা ক্যামেরার সামনে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে ঘটনা সম্বন্ধে ছৈফতুল্লাহর পরিবারের সদস্যের কাছে জানতে চাইলে পুরো ঘটনা উল্টো বলে দাবী করেন। ছৈফতুল্লাহর ছেলে ও ভাইদের দাবী, নারীঘটিত একটি বিষয় নিয়ে ঝামেলা চলছিল সিরাজুলের সাথে। যার মামলা চলমান রয়েছে। মামলা তুলে নিতেই নাকি সিরাজুল হাঁসুয়া দিয়ে পিছন দিক থেকে ছৈফতুল্লাহর মাথায় কোপ মেরে গুরুতর আহত করে। যেটি নিয়ে গাংনী থানায় গত শনিবার রাতে একটি মামলা হয়েছে বলেও জানান।
বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা এর সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে জানান। তিনারা জানান, আহত ছৈফতুল্লাহকে নিয়ে তিনারা ব্যস্ত ছিলেন। সিরাজুল ইসলাম খারাপ প্রকৃতির লোক হওয়ায় গ্রামবাসীরা রাগ ও ক্ষোভে সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে।
রবিবার (৪ মে), সরেজমিনে মহাম্মদপুর গ্রামে গিয়ে আহত ছৈফতুল্লাহর বাড়ির সদস্যদের পাওয়া গেলেও লুটপাট হওয়া সিরাজুল ইসলামের বাড়ির কারো দেখা মেলেনি। ভাংচুর ও লুটপাটের সময় অস্ত্রশস্ত্র দেখে প্রাণহানির ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন বলে প্রতিবেশীর কয়েকজন জানান।
তিনারা জানান, একে-অপরকে মারধরে দু’জনই আহত হয়েছে। তবে ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে পরিবারটিকে নিঃশেষ করে পথে বসিয়ে দেওয়া অমানবিক। এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন তিনারা।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাণী ইসরাইল জানান, ঘটনায় ছৈফতুল্লাহ’র পরিবারের পক্ষে মামলা করেছেন। সিরাজুল ইসলামের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।