নওগাঁ প্রতিনিধি:
এলজিইডির উদাসীনতার কারণে মাসের পর মাস পার হলেও নওগাঁর রাণীনগরে সরকারি হাটের নির্ধারিত স্থানে পল্লী মার্কেট ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কতিপয় দখলদারদের বাঁধার মুখে উপজেলার কুজাইল হাটে দোতলা ওই পল্লী মার্কেট ভবন নির্মাণের চূড়ান্ত জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। ফলে উন্নয়নমূলক ভবন নির্মাণ করা নিয়ে কাটছে না ধোঁয়াশা। তাই সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে এলজিইডির কেন এমন উদাসীনতা এমন প্রশ্নই বর্তমানে সাধারণ মানুষদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ ও ইউএনও মোহাইমেনা শারমীনসহ ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা সরেজমিনে স্থানটি দেখতে গেলে সেখানে দুই একজন নির্ধারিত স্থানে না হওয়ার পক্ষে হাত তোলেন। অপরদিকে উপস্থিত প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী নির্ধারিত স্থানে হওয়ার পক্ষে মতামত জানান। এরপর নির্ধারিত স্থানে ভবনটি নির্মাণের আশ^াস দিয়ে আসেন নির্বাহী প্রকৌশলী। তারপরও অদৃশ্য কারণে থমকে আছে ভাঙার কাজ।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কুজাইল হাটে চারতলা ফাউন্ডেশনে দুতলা পল্লী মার্কেট ভবন নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। যার প্রাক্কলিত মুল্য ধরা হয় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মেসার্স সাহারা কনস্ট্রাকশন-ইএসবি নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি চলতি বছরের ১৯ মে শুরু করে ২০২৫ সালের ৩০ আগষ্ট শেষ করার কথা। কিন্তু বাধ সাঁধে কতিপয় স্থানীয় কিছু দখলদাররা। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করছে, তাদের অবৈধ স্থাপনাগুলো যেন ভাঙা না যায়। যার কারণে নির্ধারিত ওই স্থানটি ঠিকাদারকে বুঝে দিতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় আর সঠিক পদক্ষেপের অভাবে ঠিকাদার আজও ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি। যার কারণে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প।
স্থানীয়দের অভিযোগ হাতে গোনা তিন-চারজন ব্যবসায়ীর কারণে পিছে হটছে এলজিইডির কর্মকর্তারা। আর ভবন নির্মাণের পক্ষে থাকায় শতাধিক ব্যবসায়ীরা ঝাড়ছেন ক্ষোভ। ফলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন প্রশাসন।
কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মোকলেছুর রহমান বাবু বলেন, সরকারের এমন উন্নয়ন মূলক কাজকে দ্রæত বাস্তবায়নে এলজিইডি ও প্রশাসনের কেন এমন উদাসীনতা তা আমার বোধগম্যে আসছে না। হাটটির ভবন নির্মাণের স্থান স্থানীয় ভূমি অফিসের অধীনে। তাই কাজটির কার্যাদেশ হওয়ার আগে উপজেলা প্রকৌশলী তৎকালীন ইউএনও, এসিল্যান্ড, সার্ভেয়ার ও স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা বাজার কমিটির মতামতের ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে স্থান নির্বাচিত করে। এছাড়া ভবিষ্যতে এই বাজারের পারঘাটিতে একটি ব্রিজ নির্মাণ হতে পারে। তখন সেই স্থাপনাগুলো এমনিতেই ভাঙতেই হবে। তাই সবকিছু চিন্তা করে উপযুক্ত জায়গা নির্বাচিত করা হয়েছে। কতিপয় স্থানীয় কিছু কুচক্রী ব্যক্তিদের ষড়যন্ত্রের কাছে এমন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ হতে পারে না। আমি এই ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য কর্তৃপক্ষদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
কুজাইল হাটের ব্যবসায়ী ডাবলু, হাসান, চা বিক্রেতা সাইফুল প্রামাণিক, দোকানী জাহাঙ্গীর আলমসহ শতাধিক ব্যবসায়ী উন্নয়নমূলক এই ভবন নিমার্ণের পক্ষে। তারা জানান, হাটের সমস্ত জায়গাটি সরকারের। উন্নয়নমূলক কাজ করবে, তাতে আবার সংশ্লিষ্টদের লুকোচুরি কিসের, তাও আবার দুই-চারজনের বাঁধার মূখে প্রশ্নের সুরে বলেন তারা। আমরা চাই নির্ধারিত স্থানে দ্রুত ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হোক।
আরেক ব্যবসায়ী ফজে সরদার বলেন, আমি প্রায় ২০বছর যাবত ব্যবসা করে আসছি। তিনিসহ হাটের নব্বই ভাগ দোকানীরা চান নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক। কিন্তু প্রশাসন কেন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে গড়িমসি করছেন তা সত্যিই রহস্যজনক।
জানতে চাইলে মেসার্স সাহারা কনস্ট্রাকশন-ইএসবি নামক প্রতিষ্ঠানের প্রোজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার ইমরুল কায়েস ইমন মুঠোফোনে বলেন, কাজটি চার মাস আগে আমরা পেয়েছি। কিন্তু শুরু করতে পারিনি। এই জন্য এলজিডি অফিসে দুই দফায় আবেদন করেছি। তারা সীমানা বুঝে দিলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময়ে শেষ করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন মুঠোফোনে বলেন, নির্ধারিত স্থানে ভবন নির্মাণ না করে, হাটের মাঝখানে ভবন নির্মাণের জন্য অনেকগুলো লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা সমন্বয় মিটিং এ আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয়কে নিয়ে হাটে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। এখন জেলা প্রশাসক স্যারের পরামর্শক্রমে দ্রুত একটি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এলজিইডি নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ জানান, কুজাইল হাটে ভবন নির্মাণ করা নিয়ে জটিলতা কাটছে না। একাধিকবার মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে স্থান চূড়ান্ত হওয়ার পরই বরাদ্দ এসেছে। নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য ইতিমধ্যেই সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে নির্মাণ বিষয়ে স্থানীয়দের হাতে কলমে বোঝানোর কিছু নেই। যদি স্থানীয়রা বাধা প্রদান অব্যাহত রাখেন তাহলে প্রকল্পটি অন্যস্থানে স্থানান্তর করা হবে।
জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মুঠোফোনে বলেন, উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই। জনগণ যেখানে ভালো মনে করবে, সেখানেই হবে। তাই লোকাল লিডকে প্রাধান্য দিয়ে এবং আইন কানুনের সাথে সমন্বয় করে এই নির্মাণ কাজটি করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।