সাব্বির মির্জা, তাড়াশ ( সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার বিলাঞ্চলে অবাধে চলছে শামুক ও ঝিনুক নিধন। স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীরা প্রতিদিন বিল থেকে শামুক সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। উন্মুক্ত জলাশয়ের প্রাকৃতিক ফিলটার হিসেবে পরিচিত এসব জলজ প্রাণী নিধনের ফলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে বিভিন্ন বিল অঞ্চল থেকে ব্যাপকহারে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাস চলে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের কাজ, তবে এবার বর্ষার পানি দেরিতে নামায় আরো এক মাস চলবে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ।
উপজেলার, কামাড়শোন, দিঘী সগুনা, কুন্দইল, মাকড়শোন, বিল-নাদো, মান্নান নগর, ঘরগ্রাম, মাগুরা বিনোদ, হামকুড়িয়াসহ ২০-২৫টি স্থানে প্রায় ৫০০ নৌকাযোগে স্থানীয় লোকজন প্রতিদিন অবৈধভাবে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করছেন। প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন টন শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের জন্য স্থানীয় দরিদ্র চাষি এবং মৎস্যজীবীদের ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা দিয়েছে একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র।
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একজন ব্যক্তি তিন থেকে চার বস্তা শামুক সংগ্রহ করে থাকে। প্রতি বস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
স্থানীয় ব্যাপারীরা এই শামুক ক্রয় করে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মাছের খামারগুলোর খাদ্য হিসেবে বিক্রি করছেন। চলনবিলে প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার শামুক বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
শামুক সংগ্রহকারী মোতালেব হোসেন জানান, বর্ষার সময়ে তাদের কাজ থাকে না, চাষাবাদ বন্ধ থাকে, পেটের দায়ে স্থানীয় শামুক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নিয়ে তারা শামুক সংগ্রহ করেন। শামুক সংগ্রহ করে প্রতিদিন জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়।
শামুক ও ঝিনুকের ব্যবসায়ী আব্দুল মমিন জানান, ছোট-বড় সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ জন ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা স্থানীয় সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে শামুক কিনে বিভিন্ন জেলার পাইকারি দরে আড়তে বিক্রি করেন। বর্ষার তিন থেকে চার মাস শামুক কেনাবেচা হয়।
তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিদ্যুৎ কুমার জানান, ২০১২ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শামুককে জলজ প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হলেও এই আইন অমান্য করে চলছে শামুক নিধন। শামুক সংগ্রহের অপরাধে জেলসহ অর্থ দণ্ডের বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগ না হওয়ার কারণে থামছে না শামুক নিধন।
তিনি আরো বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ে, বিশেষ করে খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়ে বংশবিস্তার করে থাকে শামুক ও ঝিনুক। অপরদিকে জলাশয়ের নোংরা পানির পোকামাকড় আহার করে পানি বিশুদ্ধকরণের কাজ করে। স্থানীয় মিঠা পানির মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে শামুক।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, শামুক ঝিনুক সংগ্রহের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে তাদের সচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে শামুক সংগ্রহ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।