নওগাঁ প্রতিনিধি:
অবশেষে সরকার ও সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের সহযোগীতায় মিন্টুর লাশ ফিরে পেয়েছে তার পরিবার। গত শুক্রবার ১৭ মে বাদ-মাগরিব এর নামাজ শেষে রাত সাড়ে ৭টার দিকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন মিন্টু। সেখানে গিয়ে লাশ হয়ে পড়ে ছিল। আর প্রবাসী মিন্টুর লাশ দুবাই থেকে দেশে আনতে আকুতি জানিয়েছিল তার অসহায় স্ত্রী পারভীন আকতারসহ পরিবারের সদস্যরা। দুবাইয়ে ৪ মাস আগে মারা যাওয়া বাংলাদেশের ৪৩ বছরের মিন্টু নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের এনায়েপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত জামাল জদ্দারের ছেলে। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে মিন্টুই সবার বড়।মারা যাওয়ার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অর্থের অভাবে মিন্টুর লাশ দেশের বাড়িতে আনতে পারেনি তার পরিবার। মিন্টুর লাশ দেশে আনতে সরকারি সহযোগীতাসহ সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগীতা চেয়েছিলেন অসহায় পরিবারটি।মিন্টুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মিন্টু দেশে পেশায় একজন মেকানিক ছিলেন। তার পরিবারে অভাব-অনাটন যেন পিছু ছাড়ছিল না। পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে মা, স্ত্রী ও দু’টি কণ্যা সন্তান রেখে অর্থ উপার্জনের জন্য ঋন করে বাংলাদেশ থেকে একটি কোম্পানির ভিসায় গত ২০২১ সালে পারি জমান দুবাইয়ে। বিদেশ গিয়েও যেন ভাগ্যের চাকা উল্টে যায় তার। কয়েক মাসের মাথায় ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি হয়ে যান অবৈধ প্রবাসী। অনেক চেষ্টার পরেও বৈধ প্রবাসী হতে পারেননি তিনি। এরপর থেকে দীর্ঘ তিন বছর গোপনে দুবাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন। এতে করে তার ঋন পরিশোধ তো দুরের কথা নিজের খাওয়া-পড়াও জোটাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন মিন্টু। এরই মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে স্ট্রোক করে দুবাইয়ে একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। মিন্টুর স্ত্রী পারভীন আকতার বলেন, আমার স্বামীকে গত প্রায় তিন বছর আগে দুবাই নিয়ে যায় কাশিমপুর চারাপাড়া গ্রামের অঞ্জু দালাল। কোনো কাগজপত্র না থাকায় অবৈধভাবেই ছিলেন তিনি আমার সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৪ মাস আগে একবার কথা হয়েছে। এর পর থেকে ফোন বন্ধ থাকায় কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। স্বামীর মারা গেলেও আমরা পরিবারের লোকজন কেউ ওই সময় তার মৃত্যুর খবর পাইনি।হটাৎ করে চলতি মে মাসের ১০ তারিখে প্রবাসী কল্যাণ কার্যালয় থেকে আমার স্বামী মিন্টুর মৃত্যুর খবরটি পাই। এরপর লাশটি দেশে নিয়ে আসার জন্য অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু লাশটি দেশে আনার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ পড়বে। আমাদের অভাবের সংসার। এতগুলো টাকাতো আমাদের পরিবারের কারো কাছে নেই। তাই স্বামী মিন্টুর লাশটি এখনো দেশে আনতে পারিনি। প্রতিবেশীরা টাকা সংগ্রহ করতে যথেষ্ট সাহায্য সহযোগীতা করছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি। কয়েকজন প্রবাসী ও বাংলাদেশী কিছু ব্যক্তির সহযোগীতার তার লাশটি নিয়ে আসা হয়। তিনি আরও জানান, এখন পরিবারের ঋনের বোঝা এবং দু’টি কণ্যা সন্তান নিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পরেছি।কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন মকলেছুর রহমান বাবু বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি, তার পরিবারটি খুবই অসহায়। আমার পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব ওই পরিবারকে সহযোগিতার চেষ্টা করবো। এছাড়া সমাজের বিত্তমান ও হৃদয়বান ব্যক্তিরা সহযোগীতার হাত বাড়ালে পরিবারটি উপকৃত হবেন।উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ সহযোগীতার আবেদন করেনি। যদি আবেদন করেন তাহলে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে সহযোগীতা করার চেষ্টা করবো।