রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম প্রাণের উৎসব কারাম পরব উদ্যাপন করেছেন মাহাতোরা। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম আটঘরিয়া গ্রামে ঢাকঢোল বাজিয়ে, গান-নাচ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে তারা মেতে ওঠেন এ উৎসবে। দিনব্যাপী নানা আচার-অনুষ্ঠানে বাবা ও ভাইদের মঙ্গল কামনা করা হয়।
ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীতে পালিত হয় এই উৎসব। সকালে প্রস্তুতি শুরু হয় এবং দুপুরে শুরু হয় মূল আয়োজন। মাঠে কারাম গাছের ডাল পুঁতে ফুল, ফিতা ও শাপলা দিয়ে সাজানো হয়। প্রদীপ জ্বালিয়ে চলে পূজা ও আনন্দ-উৎসব। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকলে অংশ নেন এই পরবে।
লেখক ও গবেষক উজ্জ্বল মাহাতো বলেন, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহাতো, বড়াইক, কুর্মি, সিং, পাহান, মাহালি প্রভৃতি—নিজ নিজ প্রথায় এ উৎসব পালন করে থাকে। কারাম গাছের ডালকে কেন্দ্র করেই এ উৎসবের নামকরণ। অনেক এলাকায় একে ডালপূজা নামেও ডাকা হয়। তিনি জানান, এ উৎসব পাঁচ দিনব্যাপী চলে, কোথাও কোথাও সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অংশগ্রহণকারীরা এ সময় আমিষ, তেল, মসলা ও হলুদজাতীয় খাবার পরিহার করেন। তাদের বিশ্বাস, নিয়ম ভঙ্গ করলে বীজের অঙ্কুরোদগম ব্যাহত হয়, যা প্রকৃতির সঙ্গে তাদের আত্মিক সম্পর্কের প্রতীক।
উৎসবে অংশ নিতে আসা বগুড়া টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোহন মাহাতো বলেন, “বছরের এই দিনে সবার সঙ্গে আনন্দ করার জন্য গ্রামে ফিরে আসি।
গ্রামের স্বপনা রানী ও চঞ্চল মাহাতো জানান, এই দিনে এলাকার মানুষ পূজা আর আনন্দে মেতে ওঠেন। সবাই জামাই বাড়ী থেকে বাবার বাড়িতে আসে এই পরব উৎসব করতে।
বিপন্ন ও দুর্লভ বৃক্ষের সংগ্রাহক মাহবুবুল পলাশ বলেন, কারাম গাছটি বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে।আমি এই গাছের চারা তৈরি করে বিতরণ করেছি।
অধ্যাপক ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উদয় শঙ্কর বিশ্বাস বলেন, “কৃষি ও বৃক্ষের সঙ্গে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আত্মার সম্পর্ক রয়েছে।”
এ বছর কারাম উৎসব আয়োজন করে কুড়মালি ভাষা- সাংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র,কুড়মালি পাঠশালা।