রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ফুলজোড় নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ফের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন এলাকাবাসী। নদী ভাঙন, জমি ক্ষয়, অবকাঠামোগত ঝুঁকি এবং প্রশাসনিক নির্লিপ্ততার অভিযোগ তুলে রবিবার (১৩ জুলাই) সকাল ১১টায় ভূঁইয়াগাঁতী ফুলজোড় সেতুর উপর স্থানীয়রা ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
‘নদী বাঁচাও, সেতু বাঁচাও, ভূমি বাঁচাও’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে মানববন্ধনে অংশ নেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন মোহাম্মদ আলী, মোকাদ্দেস হোসেন সোহান, সিরাজুল ইসলাম সোহাগ, সাইদুল ইসলাম, ফরিদুল ইসলাম, রাসেল মাহমুদ, রুবেল শেখ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রশাসনের চোখের সামনে থেকে ফুলজোড় নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে নদীর গতিপথ বদলে গিয়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এলাকার অনেক ফসলি জমি, ঘরবাড়ি এবং যোগাযোগ সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।”
বিশেষ করে ভূঁইয়াগাঁতী সেতুটি বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। তারা জানান, সেতুর পিলারের পাশ থেকে রাতের আঁধারে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে, যা যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের একটি শক্তিশালী চক্র বারবার প্রশাসনিক জরিমানার মুখেও থেমে নেই। তারা জানান, “বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংশ্লিষ্ট দলের কয়েকজন নেতাই এ কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। বর্তমানে সরকার পতনের পর নতুন আরেকটি চক্র আবারও একই পদ্ধতিতে বালু তুলছে। আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো স্থায়ী সমাধান পাইনি।”
এ প্রসঙ্গে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) স্থানীয় প্রশাসন ফুলজোড় নদীতে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। অভিযানে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী একটি বালু মহাল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ অভিযান দৈনিক প্রতিদিনের দৃশ্যপট পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছে।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, একবারের জরিমানায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চক্রটি আরও সচল হয়ে উঠেছে, বরং নতুনভাবে মাটি ও সেতুর নিচে ড্রেজিং শুরু করেছে।
মানববন্ধনে বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ, ফুলজোড় সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও নদীর ড্রেজিং পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানান তারা।