বিশেষ প্রতিনিধি শাহজাদপুর:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জুগ্নীদহ তাহফিজুল কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্রদের ধারাবাহিক ভাবে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মুন্নাফের বিরুদ্ধে। বলাৎকারের পর ভূক্তভোগীর গলায় দা ঠেকিয়ে ঐ শিক্ষক মেরে ফেলার হুমকি দিতেন যেন ঘটনা প্রকাশ না পায়। এ ঘটনায় শাহজাদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এদিকে ঘটনা প্রকাশের পরেই মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ, ছাত্ররা নিজেদের ব্যাগপোটলা গুছিয়ে চলে যাচ্ছে মাদ্রাসা ছেড়ে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য মোঃ আমিরুল ইসলাম, উপদেষ্টা সদস্য মোঃ আজাদ, অভিভাবক মান্নানসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুগ্নীদহ তাহফিজুল কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মুন্নাফ দীর্ঘদিন যাবৎ আবাসিক ছাত্রদের বলাৎকার করে আসছে। বিষয়টি মাদ্রাসার সুপারকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানালেও তিনি কোনরকম ব্যাবস্থা গ্রহন না করে তাদের ঘটনা প্রকাশ করতে নিষেধ করেন। সম্প্রতি ঐ মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের দুজন শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় না যেতে চাইলে অভিভাবকরা জানতে চাইলে তারা জানায় মাদ্রাসার শিক্ষক তাদের গভীর রাতে রুমে টেনে নিয়ে মুখ চেপে ধরে খারাপ কাজ করে। এ ঘটনা কাউকে বলে দিলে দা দিয়ে গলা কেটে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। বিষয়টি জানার পর রবিবার রাত ১০ টার দিকে অভিভাবকরা মাদ্রাসায় গেলে মাদ্রাসার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম হেলাল, এবং সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন ভুক্তভোগী অভিভাবকদের উপর ক্ষিপ্ত হন এবং তাদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দেন। এসময় ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়লে মাদ্রাসায় রাতে কয়েক শত লোক জুটে গিয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষকের বিচার দাবী করে স্লোগান দিতে থাকে। এসময় উত্তেজিত জনতা মাদ্রাসার দুজন শিক্ষককে মারধরও করে। পরে খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ উপস্থিত হলে মাদ্রাসা সুপারসহ কমিটির লোকজন পালিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকেই একে একে সব শিক্ষার্থী তাদের জিনিসপত্র নিয়ে মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যায়।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ভূক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের শিক্ষক মুন্নাফ গভীর রাতে একেকদিন একেকজন শিক্ষার্থীকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে খারাপ কাজ করে এবং এ ঘটনা কেউ যেন প্রকাশ না করে তার জন্য মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
কথা হলে প্রত্যক্ষদর্শী মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র মোঃ আব্দুল্লাহ এবং সামিউল ইসলাম জানান, কয়েকদিন আগে রাতে তাদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে ছোট শিক্ষার্থীকে হুজুর তার রুমে নিয়ে যায়। পরে তারা টিনের বেড়ার ফুটো দিয়ে উকি মেরে দেখে হুজুর জোড় করে ঐ শিক্ষার্থীর সাথে খারাপ কাজ করছে। এসময় একজন টিনে শব্দ করলে হুজুর বাইরে এসে তাদের গলায় মাছ কাটা দা ঠেকিয়ে হুমকি দেয় যে, কেউ ঘটনা প্রকাশ করলে তাকে মেরে ফেলা হবে।
এদিকে ঘটনা প্রকাশের পর থেকেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ গা ঢাকা দেওয়ায় মাদ্রাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চেয়ে মাদ্রাসার সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই কথা বলতে পারবেন না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অপরদিকে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের মুঠোফোনে ( ০১৭২৪ ৩৬৫৮৫০) একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি মোঃ আছলাম আলী জানান, বলাৎকারের অভিযোগে জুগ্নীদহ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসার এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।