নিজস্ব প্রতিনিধি:
বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে যমুনার কুল ঘেষে প্রতিষ্ঠিত “সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পার্ক প্যানেলের নীচে চাষ করা হচ্ছে আলু, বেগুন, টমেটোসহ নানা প্রকার শাক-সবজি। এছাড়াও বিস্তৃর্ণ চারণভুমিতে পালন করা হচ্ছে উন্নতজাতের গাড়ল। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি শাকসবজি ও গবাদি পশু পালনেও সাফল্যের মুখ দেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পশ্চিমে বয়ে চলা যমুনা নদীরে ক্যানেলে মাছ চাষেরও উদ্যোগ নিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. তানবীর রহমান।
জানা যায়, যমুনা নদীর কোল ঘেষে প্রতিষ্ঠিত হওয়া “সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পার্ক” সোলার প্যানেলের নীচে বিস্তৃর্ণ উর্বর জমিতে চাষাবাদের সিদ্ধান্ত নেয় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। গত শীত মৌসুমের শুরুতে প্রায় দশ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করা হয়। পেয়াজ, মরিচ, আলু, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, কচু এবং বিভিন্ন শাক সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে আলু, বেগুনট মেটো, কচু এবং মিষ্টি কুমড়ার উল্লেখযোগ্য ফলন হয়েছে। অপরদিকে বর্ষা মৌসুম শেষে পানি শুকিয়ে গেলে প্রচুর প্রাকৃতিক ঘাস জন্মে। সেই ঘাসে উন্নতজাতের গাড়ল পালন হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পার্ক প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ ও টেকসই উন্নয়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের উপর গুরুত্বারোপ করে প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কো. লি. (নওপাজেকো) ও চীনের চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) এর যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-চায়না রিনিউয়েবল এনার্জি কো. লি. (বিসিআরইসিএল) এর আওতায় যমুনার কোল ঘেষে ২১৪ একর অনাবাদি জমিতে সোলার পার্কটি নির্মাণ করা হয়। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে এ প্রকল্পটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে যায় এবং জাতীয় গ্রীডে যোগ হয়। এরপরই শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনই নয়, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে সৌর প্যানেলের নিচের ফাঁকা জমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের অপার সম্ভাবনা দেখেন প্রকল্প পরিচালক মো. তানবীর রহমান। তার উদ্যোগেই এখানে স্থানীয় কৃষকদের সহায়তায় বিভিন্ন ফসলের চাষ শুরু হয়।
সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. তানবীর রহমান বলেন, যমুনা নদীর গা ঘেসে স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বছরের অর্ধেক সময় পানিতে প্লাবিত থাকে। বিষয়টি মাথায় রেখে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উচু উচু পাইল দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। এতে বন্যার সময় সোলার প্যানেলগুলো নিরাপদ থাকে। সেই সাথে শুকনা মৌসুমে জমির বহুমাত্রিক ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা এবার শীত মৌসুম থেকে স্থানীয় কৃষকদের সহযোগীতায় পরীক্ষামূলকভাবে শাকসবজি চাষ শুরু করেছি। অনেক ফসলেরই ভালো ফলন হয়েছে। পরবর্তীতে বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বিস্তৃত চারণ ভূমিতে প্রচুর প্রাকৃতিক ঘাস জন্মায় যেগুলো গবাদিপশু পালনের জন্য উৎকৃষ্ট। এ কারণে সল্প পরিসরে কিছু উন্নতজাতের গাড়ল পালন করা হচ্ছে। এছাড়াও পশ্চিম দিকে বয়ে চলা যমুনার ক্যানেলে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে মাছ ও হাঁস চাষের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে তিনি বলেন।
আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি Agrovoltaic farming প্রযুক্তির মাধ্যমে জমির বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চত করতে আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এতে একসাথে বিদ্যুৎ ও খাদ্য উৎপাদন করে জমির অপচয় রোধ হচ্ছে। পাশাপাশি আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, স্থানীয় কৃষকদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষি অফিসার মো. আনোয়ার সাহাদত বলেন, সৌর বিদ্যুৎ প্যানেলের নীচে প্রকল্প কর্মকর্তারা চাষাবাদের উদ্যোগ নেওয়ায় জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসাররা সেখানে গিয়ে পরামর্শও দিয়ে এসেছে। জমিগুলোতে ফসলের ফলনও ভালো হয়েছে।