1. thedailydrishyapat@gmail.com : TheDaily Drishyapat : TheDaily Drishyapat
  2. info@pratidinerdrishyapat.com : Pratidiner Drishyapat : Pratidiner Drishyapat
  3. admin@thedailydrishyapat.com : admin :
সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯ অপরাহ্ন

ভিক্ষায় চলছে পেট জমিদার শফির

সংবাদ প্রকাশক:
  • Update Time : রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫
  • ২৭ Time View

দৃশ্যপট ডেস্ক:

দুইশো শতক জমির বিশাল বাড়িতে জন্ম হয়েছিল শফি সরকারের। দাদা ও বাবা ছিলেন প্রায় তিনশো বিঘা সম্পত্তির মালিক। গাঁয়ের দাপুটে জমিদার বলে খ্যাত ছিল সরকার পরিবার। দোর্দন্ড প্রতাপ আর এলাকাজুড়ে ছিল নামডাক।
কিন্তু “চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়, আজকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়” কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত এই গানের মতোই নিয়তি নির্মম খেলা খেলেছে এই জমিদার পরিবারটির সাথে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একডালা গ্রামের শফি সরকার এখন শুধু নামেই সরকার। জমিদার পরিবারের বংশধর হয়েও এখন তার জীবন চলছেন ভিক্ষাবৃত্তি করে। আর শুয়ে থাকতে হয় হাঁস-মুরগীর খোপের মতো একটি ঘরে। প্রায় আশি বছর বয়সী শফি সরকার বয়সের ভারে নূব্জ। দুবেলা দুমুঠো খাবারের যোগাড় করতে প্রতিদিন বিকেলেই গাঁয়ের বাজারে ভিক্ষা করতে বের হন।

একডালা গ্রামে ইছামতি নদীর পারে একটি ক্লাবের পাশে ছোট্ট জায়গায় এলাকাবাসীর তৈরি করে দেওয়া হাঁস-মুরগীর খোপের মতো ঘরে বাস করেন তিনি। ঘরখানার পেছনে টয়লেট সামনে টয়লেটের হাউস। চারদিকে ময়লা দূর্গন্ধ আর আবর্জনায় পরিপূর্ণ। ঘরখানাতে নেই বিদ্যুৎ, নেই আলোর ব্যবস্থা। এমন একটি জায়গায় বনের পশুর মতো মানবেতর জীবনযাপন করছেন শফি সরকার। তিনখানা ইট দিয়ে বানানো চুলায় দিনে একবেলা রান্না করেন তিনি।

অতিশয় বৃদ্ধ তাই কাজকর্ম করতে না পারায় স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। বগুড়ার ধনুট উপজেলার গোপাল নগর এলাকায় থেকে তিনিও ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মানসিক প্রতিবন্ধী একমাত্র ছেলে দেশান্তরী। আর স্বামী পরিত্যক্তা একমাত্র মেয়ে মায়ের সাথেই থাকেন।

এলাকাবাসী জানান, শফি সরকারের দাদা নঈমুদ্দিন সরকার ছিলেন একডালা গ্রামের নামকরা জমিদার। যার নামে তটস্থ থাকতো পুরো এলাকা। প্রতাপশালী এই ব্যক্তি এলাকার সকল বিচার-শালিস করতেন। হঠাৎ তাঁকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তার পরবর্তী প্রজন্ম একে একে সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। কেউ টাকা দিয়ে আবার কেই এমনিতেই সম্পত্তি দলিল করে নিয়েছেন। বর্তমানে এই বংশের একমাত্র বংশধর হিসেবে বেঁচে রয়েছেন শফি সরকার।

শফি সরকার বলেন, আমার দাদা নঈমুদ্দিন সরকার ছিল। রতনকান্দি ইউনিয়নের এই এলাকার প্রধান ছিল। বিচার-শালিস করছে। তাকে মেরে ফেলে দিয়েছে। তার জমি ছিল ১৯৬ পাহী, তার কাগজপত্র আছে। মাইনসে লুট করে নিয়েছে। সবাই বেদখল করে রেখেছিল, আমার বাবা ছিলেন নঈমুদ্দিন সরকারের বেটা, তার কাছে কেউ গেলেই জমিগুলো দলিল করে দিয়েছে। এখনো ৫০/৬০ বিঘা জমি মাইনসে খাচ্ছে। কারও সাথে কথা বলা যায় না। এখানে ৭০ ডিসিমাল জমি আছে। আমার বাবা ছোট থাইকতে নঈমুদ্দিন সরকারকে মেরে ফেলে দেয়। আমার বাবা পড়াশোনা করতে পারে নাই।
আমি কাজকাম করতে পারি না, বউ চলে গেছে, সে বলে তোক পাইল্যা কি হবে, তোর কিছু নাই। আমি আগে ভালো থাকতে কাম করে খেয়েছি। এখন বেরাম ধইর্যাব কামকাজ করতে পারি না। মাইনসের কাছে চাইয়া চিন্তা খাই।

প্রতিবেশী আয়নাল মন্ডল বলেন, নঈমুদ্দিন সরকারের বহুত জমি ছিল। একডালা গাঁয়ের সেরা জমিদার ছিল। তাকে মেরে ফেলে দেওয়ার পর তার বেটারা বোনেরা সব জমি ভাগ করে বেঁচে খেয়েছে। তার বেটা হজা (হযরত আলী সরকার) সরকারের দুই বেটা ছিল, একটা মারা গেছে। আর শফি সরকার বেচে আছে। সে হাটে বাড়ি উপর কালেকশন করে চলছে। বাড়িঘর নাই, উটুলি জায়গায় আমরাই হাট কালেকশন করে দুইটা টিন কিন্যা একটা ছই বানিয়ে দিয়েছি। তার বিশাল বাড়ি ছিল। ৩শ পাহি জমির বেশি হইবো। ২শ ডিসিমাল বাড়িই ছিল। এসব জমি কেউ টাকা দিয়ে নিয়েছে, কেউ বিনে পয়সাতেও নিয়েছে। খুব কম দামে বেঁচেছে ১০ টাকা ডিসিমাল। তার বউ ছওয়ালকে ভাত দিতে পারে নাই। তারা বাপের বাড়ি চলে গেছে। তারাও চাইয়্যা চিন্তাই খায়। একটা ছেলে তাও পাগল।

ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা ছোটবেলায় শুনেছি, তার বাপ-দাদার অনেক জমি-জমা ছিল, সেই জমিজমা কি হয়েছে আল্লাই জানে। আমরা কিছুদিন ধরে দেখছি, উনি সম্বলহীন, বউ ছিল চলে গেছে, বাচ্চার চলে গেছে, বোনেরা ছিল তারাও চলে গেছে। তাকে সরকারি একটি জায়গায় গ্রামের লোকজন সহযোগীতা করে একটা ঘর তুলে দিয়েছে। খেয়ে না খেয়ে সেখানে অসহায়ের মতো দিনযাপন করছেন। আমরা শুনেছি অত্র এলাকার মধ্যে ওনারা জমিদার ছিল।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা আরিফা খাতুন বলেন, আমাদের স্কুলের পাশে একজন বয়স্ক মানুষ থাকে। শুনেছি ওনার পরিবারের অনেক সম্পদ ছিল, ধনী ছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় উনি অসুস্থ্য হয়ে গেছেন, ওনার পরিবার নাই। এখানে একটা ঝুপরি ঘরে থাকে। খুবই অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করেন। যদি কোন বিত্তশালী বা সরকার থেকে সাহায্য পাওয়া যেত তাহলে ওনার জন্য অনেক উপকার হতো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
প্রতিদিনের দৃশ্যপট ২০২৪
Theme Customized BY Kh Raad (FriliX Group)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com