সাব্বির মির্জা, তাড়াশ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাস কোরবানির পশু বেচাকেনায় অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিক্রেতাদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হচ্ছে। এতে হাটপ্রতি অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ইজারাদাররা।
সরেজমিনে পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, রশিদে ক্রেতার নাম, ঠিকানা এবং কত টাকায় পশুটি কেনা হলো সেটি উল্লেখ করা আছে। তবে হাটে খাজনা বাবদ কত টাকা নেওয়া হলো সেটি উল্লেখ থাকছে না। কিন্তু ইজারাদাররা গরুর ক্ষেত্রে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং খাসির ক্ষেত্রে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা আদায় করছেন। এছাড়া বিক্রেতার কাছে আরও অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
তবে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গরু, মহিষ ও ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা এবং ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে সব্বোর্চ ৬০ টাকা খাজনা আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে।
বারুহাস পশুর হাট থেকে ১ লক্ষ ১০.০০০ হাজার টাকা দিয়ে একটি কোরবানির গরু কিনেছেন গুরদাসপুর উপজেলার শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, তার কাছে পশুর ছাড় বাবদ ৬০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে তার হাতে থাকা ছাড়ের রশিদে খাজনার টাকা উল্লেখ নেই।
বারুহাস হাটে কোরবানির পশু কিনতে আসা বাবলু হক জানান, তারা (ইজারদাররা) যেটা চাচ্ছে সেটাই দিতে হচ্ছে। এখানে জনগণের কিছু করার নেই। প্রতিবাদ করলে মারধরের শিকার হতে হবে।
আনোয়ার হোসেন নামে আরেক ক্রেতা জানান, ছাড় বাবদ ৬০০ টাকা চেয়েছিল। পরে আমি ৫০০ টাকা দিই। ছাড়ের রশিদে খাজনার পরিমাণ লেখা না দেখে, পুনরায় খাজনার পরিমাণ লিখতে বলি। তখন খাজনা আদায়ে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বলেন- এটা (খাজনার পরিমাণ) রশিদে উল্লেখ করতে হবে না। আমার কাছে মনে হচ্ছে অবশ্যই খাজনার পরিমাণ লেখা উচিত। পাকাপোক্ত একটা কাগজ দেওয়া দরকার, যাতে পরে কোনো ঝামেলায় না পড়ি।
তাড়াশ উপজেলার বারুহাস কোরবানির হাটে তিনটি গরু নিয়ে এসেছিলেন আমিনুর রহমান । তিনি জানান, তার দুটি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রিত দুটি গরুর খাজনা বাবদ তার কাছে ৪০০ টাকা নিয়েছেন ইজারাদাররা।
আবু তাহের জানান, বারুহাস পশুর হাট থেকে ১ লাখ ৭০.০০০ হাজার টাকায় একটি কোরবানির গরু কিনলাম। খাজনা বাবদ ৬০০ টাকা দিয়েছি। রশিদে খাজনার পরিমাণ লেখা নেই কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা লিখে না দিলে কী করব?
বারুহাস পশুর হাটের খাজনা আদায়ের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা জানান, রশিদে কেউ খাজনার টাকা উল্লেখ করে না। সরকারিভাবে কত টাকা খাজনা তারা সেটিও জানেন না। ইজারাদাররা যে পরিমাণ খাজনা আদায় করতে বলেছেন সেটি তারা আদায় করছেন।
এ বিষয় জানতে চাইলে হাটের ইজারাদার এস.এম এনামুল হক জানান, প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে তাড়াশ উপজেলার সকল হাটে যেভাবে খাজনা নেয়া হচ্ছে আমিও সেভাবেই খাজনা নিচ্ছি আপনারা যা পারেন তাই করেন গিয়ে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নূরল ইসলাম জানান, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খাজনার অতিরিক্ত খাজনা আদায় করার এখতিয়ার কারও নেই। অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও পশুর হাটগুলো মনিটরিং জোরদার করা হবে।