নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁয় স্বামীর দেওয়া আগুনে গৃহবধূ ফজিলাতুন নেছা (২৫) মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। যৌতুকের টাকার জন্য পাষন্ড স্বামী গোলাম রাব্বানীর দেওয়া কেরোসিনের আগুনে দগ্ধ ওই গৃহবধু টানা ৮ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই ক্ষোভে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের মুক্তির মোড় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে ছাত্র সমাজ ও এলাকাবাসীর ব্যানারে এ কর্মসূচী পালিত হয়।
নিহত ফজিলাতুন নেছা সদর উপজেলার ভবানীপুর মধ্যেপাড়া গ্রামের গোলাম রাব্বানীর স্ত্রী এবং উপজেলার কোমইগাড়ী সাকিদার পাড়ার ফজলুর হোসেনের মেয়ে। সেই সাথে ফজিলাতুন নেছা নওগাঁ সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর সদস্য ছিলেন।
এসময় আগুন জে¦লে বউয়ের হত্যা রাব্বানীর দাও গণ হত্যা ও আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাহিরে বিচার চাই বিচার চাইসহ বিভিন্ন ¯েøাগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা মানববন্ধনে অংশ নেয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যৌতুকের টাকার জন্য ওই গৃহবধূকে প্রায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন স্বামী গোলাম রাব্বানী ও তার পরিবারের সদস্যরা। গত ২৭ আগস্ট সকালে যৌতুকের টাকার জন্য মারধর করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮দিন পর মারা যান ফজিলাতুন নেছা। আমরা হত্যাকারীদের দ্রæত গ্রেপ্তারের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থী জাহানার আক্তার স্বর্না ও রুমি আক্তার বলেন, যৌতুকের জন্য স্বামী তাঁর স্ত্রীকে পিটিয়ে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারবে এটি জঘন্য অপরাধ। এঘটনায় যারা জড়িত তাঁদের কঠিন শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
মহিলা কলেজের ইন্টার প্রথম বর্ষের জীবননেছা প্রীতি ও নাফিসা এবং একই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও বিএনসিসির মিথিলা বলেন, আমাদের বোনের হত্যাকারীদের দ্রæত গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে আর কোন বোনকে আমরা এভাবে না হারায়। এতদিন আগে মামলা হলেও পুলিশ মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এটি খুবই দুঃখজনক।
নিহত ফজিলাতুন নেছা মা বলেন, ‘যৌতুকের জন্য প্রায় আমার মেয়েকে মারধর করত গোলাম রাব্বানী ও তার পরিবারের সদস্যরা। এর আগে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত আমার মেয়ের শরীরে আগুন ধরিয়ে মেরেই ফেলল। খুব কষ্ট করে আমার মেয়েটা মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই।’
এব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর প্রধান অভিযুক্ত গোলাম রাব্বানীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্যে: গত ৪ বছর আগে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের আতোয়ার রহমানের ছেলে গোলাম রাব্বানীর সাথে বিয়ে হয় ফজিলাতুন নেছার। এরপর যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা হতো। গত ২৭ আগস্ট যৌতুকের জন্য ঘরে আটক রেখে ফজিলাতুন নেছার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তার স্বামী গোলাম রাব্বানী। পরে তার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয়রা গিয়ে ফজিলাতুন নেছাকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে গিলে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর ৮ দিন পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। এঘটনায় গৃহবধুর বাবা ফজলুর হোসেন বাদী হয়ে গোলাম রাব্বানীসহ তার পরিবারের ৪ সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার পর স্বামী গোলাম রাব্বানীকে গ্রেপ্তার করা হলেও শ^শুর, শাশুড়ি ও দেবরকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। দ্রæত আসামীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানানো হয়।