নওগাঁ প্রতিনিধি:
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলমান পরিস্থতির জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ঘোষণা অনুযায়ী নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। শনিবার (৩ আগষ্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের সরিষাহাটির মোড় আওয়ামীলীগের পার্টি অফিস এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। সেখানে আন্দোলনকারী এবং আওয়ামীলীগের পার্টি অফিস থেকে উভয়ের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তবে সেই সময় পার্টি অফিসের ভিতরে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনরত একাধিক শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের কাজির মোড় এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে জড়ো হয় আন্দোলকারীরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের মুক্তির মোড়ের দিকে এগোতে থাকে। মিছিলটি মুক্তির মোড় হয়ে সরিষাহাটির মোড়ে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সামনে পৌঁছালে পার্টি অফিসে অবস্থানরত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। এরপর শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ সেখানে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংঘর্ষের ঘটনায় ইটের আঘাতে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান, অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজের কন্ট্রিবিউটিং প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম শামীমসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর আন্দোলকারীরা আবার জমায়েত হয়ে মুক্তির মোড়ে অবস্থান নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে। একসময় আন্দোলকারীরা রাস্তার ওপর বসে পড়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। তবে তারা বৃষ্টিতে ভিজেই প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দেখা যায়। দুপুর দেড়টার দিকে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনরতরা আজকের আন্দোলন শেষ করেন।
বিকেল সাড়ে তিনটার সময় জানতে চাইলে নওগাঁ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আইরিন পারভীন মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, আজ সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে দুপুরের আগের শিফটে ১৭ জন এবং আমি আসার পর আরও দুই জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে একজনকে রেফার্ড করা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ চলে গেলে সেটা আমার জানা নেই। কারণ আমি শুধু তথ্য অনুযায়ী বললাম।
বিকেল চার টার দিকে জানতে চাইলে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুজ্জামান সিউল মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, আমাদের পার্টি অফিসে জেলা আওয়ামীলীগের মিটিং চলছিল সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ সকল সংসদ সদস্য। আমরা তাদের কর্মসূচি লাইভ ভিডিও’র মাধ্যমে দেখতে ছিলাম। এক পর্যায়ে তারা আমাদের পার্টি অফিসের সামনে এসে হঠাৎ করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এতে আমাদের অনেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এমনকি তারা পুলিশকে পর্যন্ত আহত করেছে। পার্টি অফিসের দরজা ভাঙচুর করেছে। পার্টি অফিসের সামনে থাকা অনেকগুলো মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে তারা। তাদের হামলা ও ভাঙচুরের ভিডিও করেছে অনেকে নেতাকর্মী। এধরণের হামলা কখনও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা করতে পারেনা।
নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক জানান, মিছিলের শুরু থেকেই পুলিশ সহনশীল আচরণ করেছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। কিন্তু মিছিলটি আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের কাছে পৌঁছালে মিছিল থেকে কিছু দুষ্কৃতকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়ে। এরপরই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইটের আঘাতে এএসপি গাজিউর রহমানের হাত ভেঙে গিয়েছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছোঁড়া হয়। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এর আগে এদিন সকাল থেকে আন্দোলকারীরা শহরের কাজির মোড় এলাকায় জড়ো হতে থাকে। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এসময় শহরে এক থমথমে পরিস্থিরি সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের এ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা যায়। ঘোষিত কর্মসূচিকে ঘিরে জেলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে মোড়ে টহল দিতে দেখা যায় তাদের। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে বড় ধরণের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।