সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সন্তান বোবা-কালা অথবা খোঁড়া হোক, কিংবা দেখতে বিশ্রী-যেমনই হোক মা-বাবার কাছে সন্তান সন্তানই। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে রাতদিন পরিশ্রম করে যান বাবা-মা। নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে আহার তুলে দেন। তাদের স্বপ্ন থাকে শেষ বয়সে হয়তো সন্তান রোজগার করে তাদের দেখভাল করবে।
কিন্তু সেই সন্তান যদি হয় আজন্ম প্রতিবন্ধী, তাহলে বাবা-মা’সহ আত্মীয়-স্বজনদের দু:খের শেষ থাকে না। এমনই অবস্থা দাঁড়িয়েছে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার সয়াধানগড়া খাঁন পাড়া মহল্লার অটোরিকশা শ্রমিক দুলাল খাঁনের।
৩২ বছর ও ২০ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েকে নিয়ে দূর্বিসহ জীবন কাটছে তার। বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অটোরিকশা চালিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের খাবারের পয়সা যোগাতে হচ্ছে। আর ঘরে তার স্ত্রী রেবা খাতুন শিশুর মতো করেই ছেলেমেয়েকে পালন করছেন।
নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়া, হাত-মুখ ধোয়ানো, গোসল করানো এমনকি পায়খানা প্রসাবও করাচ্ছেন মা রেবা খাতুন।
সরেজমিনে জানা যায়, দুলাল-রেবা দম্পত্তি দাদীর দেওয়া জায়গায় একটি টেনের ঘর তুলে বাস করেন। নিয়তি তাদের তিন তিনটি সন্তান দিয়েছে। তবে তিন সন্তানই জন্ম থেকে শারিরীক, মানসিক, শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধী। দ্বিতীয় সন্তান এক বছর বয়সে মারা গেছে। এখন ৩২ বছর বয়সী রিপন ও ২০ বছর বয়সী ফাহিমাকে নিয়ে দুঃসহ জীবন কাটছে এই পরিবারটির।
অটোরিকশা শ্রমিক দুলাল খাঁন এখন এই অবুঝ দুটি সন্তানদের মুখে আহার তুলে দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রতিদিন যা রোজগার করেন, তা দিয়ে তাদের সংসার চালানোই দুস্কর, তার উপর দুইজনের চিকিৎসা খরচ তো আছেই।
জানা যায়, দুলাল খান আগে বাসের হেলপারী করতেন। বাসে যা রোজগার হতো তা দিয়ে মোটেও সংসার চলছিল না। তাই অন্যের অটোরিকশা ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এতে দিন দুই থেকে আড়াইশো টাকার মতো রোজগার হয়। এই সামান্য আয় দিয়েও সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে তার।
দুলাল খান বলেন, আমার বড় ছেলে রিপন ৩২ বছর বয়স, সে প্রতিবন্ধী, দ্বিতীয় ছেলে হয়েছিল সেও প্রতিবন্ধী ছিল, তৃতীয় মেয়ে সেটাও প্রতিবন্ধী। আমি ৩২ বছর ধরে কষ্ট করে জীবনযাপন করছি। ভাড়ায় একটা গাড়ী চালাই, কোনমতে দিনপাত আমার চলে। দিন চারশো টাকা গাড়ীভাড়া দিতে হয় তিন দুইশো আড়াইশো টাকা থাকে। ওষুধ পানি একদিন দেই দুইদিন দেই না। সরকারের কাছে আবেদন আমার ছেলেমেয়েকে পালন করার মতো ব্যবস্থা করে দেন। মাসে ২৫শ ৩ হাজার টাকার মতো ওষুধ কেনা লাগে।)
মা মোছা. রেবা খাতুন বলেন, প্রসাব পায়খানা করতে পারে না, খাওয়াতে হয় গোসল করাতে হয়। ছেলেটা আগে হাটতে পারতো ১৫ বছর ধরে ডায়াবেটিস ধরে ও আর হাটতে পারে না। ডায়াবেটিসের ওষুধ খাওয়ানো হয়, ইনসুলিন দেওয়া হয়। আমার তিনটা বাচ্চাই জন্মের তিন মাস পর থেকেই চোখে ছানি পরে। প্রথম তিনমাস ভালোই থাকে। এরপর ছানি পরে। ধীরে ধীরে তারা প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। মেজ ছেলেটা মারা গেছে ।
চাচাতো ভাই অনিক খান বলেন, জন্মের পর থেকেই দেখছি আমার চাচা দুলাল খানের সন্তানরা প্রতিবন্ধী। তাদের সংসারে আয়ের কোন উৎস্য নাই। উনি আগে বাসে কাজ করতেন, এখন অটো চালান, যার অটো তাকে আগে ৪শ টাকা জমা দিতে হয়। দুই তিনশো টাকা দিয়ে সংসার চালাতে পারে না। সরকারের কাছে দাবি ওনাকে একটা অটো কিনে আয়ের ব্যবস্থা করে দিলে সংসারটা চালাতে হবে। আর ওনার প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য বিত্তবান মানুষের প্রতি আবেদন জানাই।
প্রতিবেশী রাশেদুল ইসলাম সেতু বলেন, ওনারা আমার প্রতিবেশী, আমার বুঝ হওয়ার পর থেকেই দেখছি এই পরিবারটি অসহায় পরিবার। ওনাদের একজনই ইনকাম করেন, ভাড়ায় অটো চালিয়ে পরিবার টানা খুবই কষ্টকর হয়ে গেছে। সরকার ও বিত্তবানদের কাছে আকুল আবেদন, ওনার জন্য একটু কর্মসংস্থান ও বাচ্চাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে পরিবারটা হয়তো রক্ষা পেত।