ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। গতকাল রাতে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানীসহ সারা দেশে রাস্তায় নেমে আসেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা।
বিচার দাবিতে তারা সড়ক অবরোধ করে, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো; আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’; ‘হাদি ভাই মরল কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’; ‘রুখে দাও জনগণ, ভারতীয় আগ্রাসন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা। রাজধানীতে বিক্ষোভকারীরা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করেন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে মারা যান ওসমান হাদি। রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় গত শুক্রবার চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
তার মৃত্যুর ঘটনায় রাত ১০টার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। এতে শাহবাগ মোড়ের চারদিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ‘তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানান।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে রিয়াদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, যুগে যুগে আবরার ফাহাদ আর ওসমান হাদিরা ফিরে আসবে। ওসমান হাদিদের হত্যা করে নিঃশেষ করা যায় না। শহীদ ওসমান হাদি যে দাবানল পুরো দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে, তা একদিন আগ্নেয়গিরি হয়ে ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, আজ আমাদের হাদি নেই। কিন্তু এখন থেকে আমরা সবাই হাদি। আমরা প্রত্যেকে হাদির প্রতিনিধিত্ব করব। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, হাদির রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও অভ্যন্তরীণ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই চালিয়ে যাবেন।
হাবিবুর রহমান নামে এম শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যতদিন বেঁচে থাকব, আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই সংগ্রাম চলবে। ভারতের আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদকে আমরা কখনোই অগ্রসর হতে দেব না।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা হাদির রক্তের শপথ নিয়ে বলেন, শহীদ ওসমান হাদির রক্তের শপথ, আজ থেকে আমরা প্রত্যেকে ওসমান হাদি। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে আমাদের কণ্ঠস্বর সমুন্নত থাকবে। আমরাও রাজপথে শহীদ হবো।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এই দেশকে দিল্লি বা পিন্ডির নির্দেশে নয়, ঢাকার জনগণের ইচ্ছায় চলতে হবে। এই দেশে কোনো কেন্দ্রীয় আধিপত্য, কোনো দিল্লির দাসত্ব চলবে না।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছানোর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা তখন আধিপত্যবাদবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে টিএসসির সামনে বিক্ষোভ দেখান।
রাত ১১টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় এনসিপি নেতাকর্মীরা হাদীর মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। এদিকে, ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন একদল তরুণ। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে নগরের খুলশী এলাকায় কার্যালয়ের সামনে তারা অবস্থান নেন। খবর পেয়ে নগর পুলিশের সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাদির মৃত্যুর সংবাদ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর রাত পৌনে ১১টার দিকে ছাত্র-জনতা পরিচয়ে ২০-২৫ জন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা হাদির হত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী স্লোগান দেন। পরে সেখানে পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে তাদের সরিয়ে দেন।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে রাত ১১টার পরে ছাত্র-জনতার ব্যানারে একদল যুবক মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ আমলের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের চশমা হিলের বাসভবনে যান। প্রথমে ভবনের সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এরপর বিক্ষুব্ধ লোকজন বাসায় প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।







