সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি জেলার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের প্রধান সংগঠন। জেলার শীর্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং শিল্প উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত। প্রায় একযুগ ধরে অনির্বাচিত কমিটির দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় এই সংগঠন থেকে ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের।
জুলাই গণঅভুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আবারও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে যাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। আগামী ৬ ডিসেম্বর চেম্বার ভবনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে সিরাজগঞ্জের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
চেম্বার নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির অর্ডিনারী গ্রুপের মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩৮ জন। এই গ্রুপে ১৭টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৫২ জন। অপরদিকে এ্যাসোসিয়েট গ্রুপে মোট ভোটার ৬৮ জন। এ গ্রুপের ৭টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১১ জন।
অর্ডিনারী গ্রুপে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন দুজন। সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জুনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ৩ জন করে এবং পরিচালক পদে ১৪ টি পদের জন্য ৪৪ জন প্রার্থী লড়ছেন। অপরদিকে এ্যাসোসিয়েট গ্রুপে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ৩ জন ও পরিচালক পদে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। আর গ্রুপ মেম্বর পদে সাইদুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন পরে চেম্বারের নির্বাচন হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই ব্যবসায়ীদের মাঝে উৎফুল্লতা বিরাজ করছে। আগে আমাদের উপর নেতৃত্ব চাপিয়ে দেওয়া হতো। এবার আমরা আমাদের পছন্দের নেতা বাছাই করার সুযোগ পেয়েছি। এবার বিপুল সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করায় একটি উৎসমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
পরিচালক প্রার্থী হাজী আব্দুস সাত্তার বলেন, দীর্ঘদিন পরে চেম্বারের নির্বাচন হচ্ছে। আমরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছি। নির্বাচিত হয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে চাই।
অপর পরিচালক প্রার্থী ওমর আজম নির্বাচতি হলে তাঁতশিল্পের উন্নয়নে কাজ করার আশ্বাস দেন। পরিচালক প্রার্থী তারাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিরাজগঞ্জ শহরে ব্যবসা-বানিজ্য করে আসছি। এর আগেও পরিচালক ছিলাম। এবারও নির্বাচন করছি। নির্বাচিত হলে ব্যবসায়ীদের কল্যানে কাজ করবো।
সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ভিপি অমর কৃষ্ণ দাস বলেন, বারো বছর ধরে চেম্বারের নির্বাচন হয় না। ফ্যাসিষ্ট সরকারের লোকজন চেম্বার দখল করে রেখেছিল। তাই এবারের নির্বাচনকে ঘিরে সবার মাঝে আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার প্রতিশ্রতি নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।
চেম্বারের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ২৪ এর ৫ আগষ্টের অভ্যুত্থানের পর ব্যবসায়ীরা যখন তাদের প্রতিষ্ঠান খুলতে সাহস পাচ্ছিল না, আমি তাদের নিরাপত্তা দিয়েছি। এ কারণে ব্যবসায়ীরা আমাকে চেম্বারের দায়িত্ব নিতে বলেন। তাদের অনুরোধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দায়িত্ব নিয়েছি। যেহেতু গণতন্ত্রের জন্য ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান হয়েছিল। সেই আন্দোলনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি চেম্বারে নির্বাচনের আয়োজন করেছি। এখন ব্যবসায়ীরা নির্বাচনী উৎসবের মধ্য দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করার সুযোগ পেয়েছে।
তিনি ব্যবসায়ীদের কাছে ভোট প্রার্থনা করে বলেন, সিরাজগঞ্জ এখন সম্ভাবনাময়। এখানে রেলপথ, সড়কপথ, নৌপথ রয়েছে, বিদ্যুৎ রয়েছে গ্যাস রয়েছে। ব্যবসা বান্ধব এলাকায় পরিণত হয়েছে। আমি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই, সিরাজগঞ্জে ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসারে কাজ করবো। সকল ব্যবসায়ী সংগঠনকে এক ছাদের নীচে আনতে চেম্বারের ১০ তলা ভবন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ইন্দ্রজিত সাহা বলেন, দীর্ঘদিন পর চেম্বারের নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক যাত্রা আবারও শুরু হলো। আমরা সম্পূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির গড়তে চাই।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সান্তু জানান, চেম্বার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
