নিজস্ব প্রতিনিধি:
বন্ধ করে দেওয়া হল সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের সিকদার ফিলিং স্টেশন। সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি পত্র দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী রাকিবুল ইসলাম সিকদার। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ ছোট, বড় বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা।
সরেজমিনে পেট্রোল পাম্পটি বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার পর মোটরসাইকেল চালককে তেলের জন্য লাইন ধরে থাকতে দেখা গেছে।
কর্তপক্ষ বলছেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ৪ লেন প্রকল্পের আওতায় মহাসড়ক ঘেঁষে সীমানা প্রচীর নির্মাণ করার কারণে পাম্পটিতে ছোট বড় ট্রাক, বাসসহ অন্যান্য যানবাহন তেল নিতে পারছে না। পাম্পটির তেল মেশিন ঘেঁষে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার কারণে অকেজো হয়ে পড়ে আছে যন্ত্রগুলো।
এদিকে পেট্রোল পাম্পটি ঘুরে ডিজেল, পেট্রোল আর অকটেনের জন্য হাহাকার দেখা গেছে। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে দামি প্রাইভেটকার ও বিলাসবহুল গাড়িগুলো।
সিকদার ফিলিং স্টেশনে কাজ করা ক্যাশিয়ার শুকুর আলী বলেন, অনেক পুরাতন এই প্রতিষ্ঠানটিতে আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কাজ করছি। এখানে কাজ করে আমি আমার ২ ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছি। কিন্তু পাম্পটির সামনে সরকারিভাবে প্রাচীর নির্মাণের কারণে কোন যানবাহনে তেল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মালিক পক্ষ বার বার ব্যবসায় লসে থাকার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে আমিসহ প্রায় ২০ জন কর্মচারী রয়েছি। আমাদের এখন কি হবে? পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা কিভাবে চলব।তাই স্থানীয় প্রশাসনের নিকট হস্তক্ষেপ কামনা করি সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটির কথা ভেবে সীমানা প্রাচীর অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, প্রতিদিন ডিজেল ৬-৯ হাজার লিটার, পেট্রোল ১ থেকে দেড় হাজার লিটার, অকটেন ৩-৫'শ লিটার ও মবেল ২০-৩০ লিটার বিক্রি হলেও সরকারিভাবে প্রাচীর নির্মাণের পর প্রতিদিন গড়ে ডিজেল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২'শ লিটার, পেট্রোল ৫ থেকে ৬'শ লিটার বিক্রি হলেও মবেল বিক্রি নাই বললেই চলে। বেচাকেনার এমন চিত্র হওয়ায় ধ্বংসের দিকে উপজেলার বৃহৎ এই ফিলিং স্টেশনটি। যেখানে মাসিক বেতন ভুক্ত প্রায় ২০জন কর্মচারী কাজ করে চলেছেন ১৯৯৬ সাল থেকে।
পেট্রোল পাম্পটিতে মিটার ম্যান হিসাবে কাজ করেন রফিক আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি এখানে ২৪ বছর ধরে কর্মরত। হঠাৎ পাম্পটি বন্ধ হওয়ার পর তার চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ চোখে পড়ল। জানতে চাইলে তিনি জানান, দীর্ঘ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখেই ছিলাম। কিন্তু বন্ধ হওয়ার পর এখন আমাদের কি অবস্থা হবে। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
বন্ধ করে দেওয়ার ব্যপারে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারীরা রাকিবুল ইসলাম সিকদারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছর যাবৎ আমার আওতাধীন ফিলিং স্টেশনটি অধিগ্রহণ করা হয়। রাস্তা মেরামতের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ পূরণ করা হলেও আমি ব্যবসায়িকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। প্রথমত সম্পূর্ণ ফিলিং স্টেশনটি আমাকে পুনারায় প্রতি স্থাপন করতে হয়েছে। পরবর্তীতে ফিলিং স্টেশনে জ্বালানী সংগ্রহের জন্য আগত যানবাহন এবং জ্বালানী গ্রহণ শেষে যানবাহন সমূহ বাউন্ডারি/প্রাচীর এর কারণে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, এমনকি রাস্তা হতে আমার পাম্পটি মানুষ ও পরিবহনের নজরের বাহিরে। ফলে আমার ফিলিং স্টেশনটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, সরকারিভাবে মহাসড়ক ঘেঁষে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ বন্ধে ও নির্মাণাধীন প্রাচীর অপসারণের দাবিতে স্থানীয়রা একটি মানববন্ধন করেছে। আমি আপাদত প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় সিকদার ফিলিং স্টেশনটির নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফিলিং স্টেশনটি বন্ধের বিষয়ে একটি লিখিত পত্র দিয়েছে। আমি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব নুরুল হক নয়ন
✆ ০৯৬৩৮-৯০৭৬৩৬। ই মেইল: thedailydrishyapat@gmail.com
।
Copyright 2025 Pratidinerdrishyapat