সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার লাখো মানুষের সিরাজগঞ্জ জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের অন্যতম সড়ক এটি। পুরাতন বগুড়া সড়ক নামের এই রুটটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ হাজার মানুষ ও কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির মাত্র এক কিলোমিটার অংশের বেহাল দশায় প্রতিনিয়তই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। খানা-খন্দ ও বড় বড় গর্তের কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দূর্ঘটনা। আর যানজট তো প্রায় লেগেই থাকে। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষকে ভোগাচ্ছে এই সড়কটি। সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনসাধারণ।
সরেজমিনে জানা যায়, পুরাতন বগুড়া সড়ক নামে সিরাজগঞ্জ কাঠেরপুল- চান্দাইকোনা সাড়ে ২১ কিলোমিটার সওজের (সড়ক ও জনপথ বিভাগ) এ সড়কটির দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন স্থানে ছোটছোট খানাখন্দ রয়েছে। তবে হাট পাঙ্গাসী বাজারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই ওইসব গর্তে হাঁটু পানি জমে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এমনকি পায়ে হেঁটে চলাও দুস্কর হয়।
কথা হয়, হাতেম আলী, ইদ্রিস সরকার ও আমজাদ হোসেনসহ স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সাথে। তারা বলেন, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার লাখো মানুষকে সিরাজগঞ্জ জেলা সদরে যেতে হয় এই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। রাস্তার যে অবস্থা, তাতে একটি রোগী নিয়ে যাওয়া যায় না। যদি কোন ডেলিভারী রোগী এই রাস্তায় আনে তাহলে রাস্তার মধ্যেই বাচ্চা হবে এমনটাই দাবী করেন তারা।
পাঙ্গাসী হলি চাইল্ড কিন্ডার গার্টনের পরিচালাক হায়দার আলী বলেন, হাট পাঙ্গাসী এলাকায় বাজারে একটি কলেজ, একটি মাদারাসা, প্রাইমারী স্কুল, কিন্ডার গার্টেন স্কুল এবং অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে গরুর হাট, মাছের আড়ত পাশেই গ্রাম পাঙ্গাসী হাট। রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ। এ রাস্তার দিকে সরকারী কর্তৃপক্ষ বা কোন রাজনৈতিক দল নজর দেয়নি।
কলেজ ছাত্র তামান্না খাতুন বলেন, এখানে দিয়ে নিয়মিত কলেজে যাতায়াত করতে হয়। যেতে অনেক কষ্ট হয়। গাড়ীতে চরে ঝাঁকিতে ঝাঁকিতে পেটে ব্যাথা করে। ঈদের মধ্যে ও হাঁটের দিন জ্যামের জন্য যাতায়াত করাই যায় না।)
সিএনজি চালক আলাউদ্দিন বলেন, এ রাস্তায় গাড়ী চালাতে গেলে টায়ার, বেয়ারিং, ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয়। রাস্তাটি আজ ১৪/১৫ বছর ধরে এই অবস্থা। আমাদের দূর্দশা দেখার মতো লোক নাই। আমাদের এলাকায় যেসব নেতা ছিল শুধু নিজেদের পেট ভরিয়েছে।
বগুড়া থেকে আসা ট্রাকচালক রহিজ উদ্দিন বলেন, এই রুটে আমাদের নিয়মিত আসতেই হয়। কিন্তু এখানে এসে নানান সমস্যায় পড়ি। গাড়ীর পার্টপাতি ক্ষতি হচ্ছে। যানজটের কারণে সময়মতো মালামাল ডেলিভারি দিতে পারছি না।
ইসলামি ব্যাংক অফিসার আল-আমিন বলেন, আমরা এখানে যাতায়াত করি, বয়স্করা এখান দিয়ে যাওয়ার সময় কোমরের ব্যাথায় দ্বিতীয়বার যাওয়ার ইচ্ছা হয় না। দীর্ঘদিন যাবদ দেখছি, ইট পারে রাস্তা তৈরি করে। কিন্তু এখানকার মানুষ পানি বের হতে দেয় না। রাস্তার উপর পানি রেখে তারা তামাশা দেখে। দুই পাশে ড্রেন করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং রাস্তাটা উঁচু করতে হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের হাঁট পাঙ্গাসী বাজার অংশটিতে পানি জমার কারণে বার বার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কয়েক বছর আগে এখানে হেরিংবন করে দেওয়া হয়। তারপরও বৃষ্টিতে পানি জমে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কাঠেরপুল-চান্দাইকোনা সড়কটির ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার অংশ সংস্কারে পিএমপি (প্রিয়োডিক মেইনটেনেন্স প্রোগ্রাম) প্রকল্পের আওতায় ১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর পর আবার বন্ধ করে দিয়েছে।
পাঙ্গাসী ইউপি সদস্য মামুন শেখ বলেন, পাঙ্গাসী রাস্তাটির বেহাল অবস্থা। ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারে না। বৃষ্টি হলে হাঁটু পানি হয়। কোথাও ভাঙা, কোথায় ডোবার মতো গর্ত। প্রতিদিনই এখানে দূর্ঘটনায় মানুষের হাত-পা ভেঙে যাচ্ছে এবং বাচ্চারা ইনজুরি হচ্ছে। রায়গঞ্জ ছাড়াও তাড়াশ ও বিভিন্ন জেলার মানুষ এই রাস্তায় যাতায়াত করে। আমরা এই রাস্তার জন্য মানববন্ধন করেছি, সংবাদ সম্মেলন করেছি। এই কাজের টেন্ডার হয়েছে। যে ঠিকাদার এই কাজ পেয়েছে, কোরবানির ঈদের আগে কাজ ধরার কথা ছিল কিন্তু এখনো কাজ ধরে নাই।
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান সুমেল বলেন, কাঠেরপুল থেকে চান্দাইকোনা সড়কটি সংস্কারের কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করেছি। ঠিকাদার কিছু অংশ কাজ করার পর আর্থিক অসক্ষমতায় নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। তাকে আমরা তাগাদা দিয়েছি। সে বৃষ্টির কারণে সে কাজ করতে পারছে না। আগামী কিছুদিন সময় দেব যদি সে করতে না পারে তবে কাজটি বাতিল করে নতুনভাবে টেন্ডার কল করে সমাপ্ত করা হবে। এছাড়াও এই রুটটি জেলা মহাসড়কের মানে উন্নীত করতে প্রশস্তকরণের ৩৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্লানিং কমিশনে রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব নুরুল হক নয়ন
✆ ০৯৬৩৮-৯০৭৬৩৬। ই মেইল: thedailydrishyapat@gmail.com
।
Copyright 2025 Pratidinerdrishyapat