দৃশ্যপট ডেস্ক:
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ফুলজোর নদীতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ খাঁচায় মাছ চাষ হচ্ছে। এতে যুক্ত আছেন ১০০ মাছচাষি। খাঁচায় মাছ চাষ বেকার যুবকদের জীবনে এনেছে আমূল পরিবর্তন। অল্প পুঁজিতে, সহজ প্রযুক্তিতে ও কম সময়ে লাভবান হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ চাষের জনপ্রিয়তা। এতে যেমন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, অসংখ্য পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আসছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফুলজোর নদীতে বকুলতলা, তিননান্দীনা, নলছিয়া, সাহেবগঞ্জ, ফরিদপুর, রামপুর, ঘুড়কা, বিষ্ণুপুর, ধানগড়া, জয়ানপুর ও ভূঁইয়াগাতী এলাকায় খাঁচায় মাছচাষ হচ্ছে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ খাঁচায় মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত আছেন ১০০ মাছচাষি। কয়েকজন মাছচাষি জানান, প্রবহমান নদীতে খাঁচায় মাছ দ্রুত বড় হয়। রোগবালাইও অনেকটা কম হয়। খাবারও অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়। এসব কারণেই খাঁচায় মাছ চাষে খরচ কম, কিন্তু লাভ বেশি। এ ছাড়া নদীর পানিতে মাছ প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। তাই স্বাদও ভালো, চাহিদাও বেশি।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এ উপজেলা পর্যায়ে সম্মাননা পাওয়া লোকমান হোসেন বলেন, আমার ৪৪টি খাঁচা আছে। এ ছাড়া আমার তত্ত্বাবধানে ১০০ মাছচাষি মিলে প্রায় দেড় হাজার খাঁচায় মাছ চাষ করছে। প্রতিটি খাঁচায় প্রথমে ৫০ গ্রাম ওজনের মাছ ছাড়ি, পরে তা এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত বড় হলে বিক্রি করা হয়। এভাবে বছরে দুইবার মাছ বিক্রি হয়। প্রতি কেজি মাছ উৎপাদনে খরচ পড়ে ১২০ টাকা, আর বাজারে বিক্রি করি ১৮০ -১৯০ টাকায়। প্রতি কেজিতে ৫০-৬০ টাকা লাভ হয়।
ফরিদপুর গ্রামের জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমার ২০টি খাঁচা আছে। এ থেকে ভালো লাভ করেছি। তাই আরও আটটি নতুন খাঁচা তৈরি করছি। বাঁশ, লোহার পাইপ, ড্রাম আর জাল দিয়ে ৬ ফুট গভীর, ১৬ ফুট প্রস্থ ও ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের খাঁচা বানাতে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। একেকটি খাঁচায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার পিস মাছ ছাড়ি। পাঁচ-ছয় মাস পর বিক্রি করি। একই গ্রামের মিদুল হক বলেন, আগে বেকার ছিলাম, এখন খাঁচায় মাছ চাষ করে আয় করছি। জীবনে পরিবর্তন এসেছে। পরিবারেও আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে।
রামপুর গ্রামের জহুরুল জানান, নদীর প্রবহমান পানিতে মাছের রোগবালাই তুলনামূলক কম। খাঁচায় মূলত মনোসেক্স তেলাপিয়া ও কার্প জাতীয় মাছ চাষ করি। বাজারে এগুলোর চাহিদা ও দাম বেশ ভালো। খামারের কর্মচারী শিহাব শেখ বলেন, আমাদের খামারে ২৪টি খাঁচা আছে। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে খাবার দিই। মাছ এক থেকে দেড় কেজি হলেই বিক্রি করা হয়।
মাছচাষিদের অভিযোগ, শিল্পকারখানার বর্জ্য নদীতে পড়লে মাছ চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাদের দাবি, প্রশাসন যেন ফুলজোর নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। রায়গঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, পুকুরের পাশাপাশি নদী ও খালের উন্মুক্ত জলাশয়ে খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, আগামী বছর খাঁচায় মাছ চাষের পরিমাণ আরও বাড়বে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব নুরুল হক নয়ন
✆ ০৯৬৩৮-৯০৭৬৩৬। ই মেইল: thedailydrishyapat@gmail.com
।
Copyright 2025 Pratidinerdrishyapat