নওগাঁ প্রতিনিধি:
যে কৃষকরা শ্রমে-ঘামে ধানের আবাদ করেছেন। ফসল ফোলাচ্ছেন। অথচ তারাই হচ্ছেন বঞ্চিত। পাচ্ছেন না নায্য মূল্য। তাদের ফোলানো ফসলে সুবিধা নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর হতাশায় ভূগছেন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সোনার ফসল উৎপাদন করা কৃষকরা। শস্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের বৃহৎ জেলা নওগাঁয় গত প্রায় এক মাস থেকে বোরো ধান কাটা-মাড়াই চলছে। হাট-বাজারে ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা।
এদিকে ধান হাটে উঠার পর থেকে দাম উঠা নামা করছে। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে হাটে অনেক কম দামে মোটা ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। আর সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করতে না পেরে হতাশ কৃষকরা। ফলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। কৃষকরা বলছেন- সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে অনেক কম মুল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফসল হাটে বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকদের মুখের হাসি মলিন হয়ে যাচ্ছে। কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক আর নেই। তবে ব্যবসায়িরা ধানের দাম পেলেও ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাদের। তাই বাজার মনিটরিংয়ের দাবী জানিয়েছে তারা।
হাটে মোটা জাত হাইব্রিড ধান ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খাটো-১০ জাত ১১০০ টাকা। তবে সরু বা চিকন ব্রি-৯০ জাতের ধান ১২৩০-১২৮০ টাকা, কাটারিভোগ ১২০০ টাকা ও সুভলতা ১১০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকার মোটা জাতের ধানের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১ হাজার ২৮০ টাকা মন। সেখানে খোলা বাজারে সরু বা চিকন জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে সরকারি মুলে। আর মোটা ধান মনে প্রায় ২০০-২৫০ টাকা কমে। সরকারি মুল্যের চেয়ে খোলাবাজারে অনেক কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যবসায়িরা ধানের দাম পেলেও ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন- ধান রোপন থেকে শুরু করে কাটা মাড়াই পর্যন্ত খরচ হয়েছে অন্তত ১৪-১৫ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ফলন হচ্ছে ২২-২৪ মন। মৌসুমের শুরুতে ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে তীব্র তাবদাহ ও খরা বইছে। প্রচন্ড গরমে জমিতে ঠিকমতো পানি সেচ দেয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া পোকার উপদ্রব হয়েছে। এতে করে বিঘাপ্রতি ৩-৪ মণ ফলন কম হয়েছে। আবার বাজারে বিক্রি করতে এসে কম দামে দিতে হচ্ছে।
মহাদেবপুর উপজেলার তেরমাইল এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন- এ বছর আবহাওয়ার কারণে ধান উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে। আবার ধানের ফলনও কিছুটা কম হয়েছে। সরু জাতের ব্রি-৯০ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩শ টাকা মন। যেখানে সরকার মোটা ধান ১২৮০ টাকা দাম বেঁধে দিয়েছে। এ ধান ১৬শ টাকা মন দরে বিক্রি হলে কৃষকদের জন্য সুবিধা। কিন্তু আমাদের পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
একই উপজেলার গাহলি গ্রামের কৃষক প্রেমানন্দ বলেন- আমরা হাটে ধান বিক্রি করতে এসে ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। সরকারি দামের চেয়ে মোটা ধান অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকদের সুবিধার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা প্রয়োজন।
ধান ব্যবসায়ি জামান হোসেন বলেন- বিগত বছরে আমরা হাটে ধান কিছুটা বেশি কিনে তা মজুত করতে পারতাম। এজন্য দাম কিছুটা বেশি ছিল। তবে এ বছর বেশি করে ধান কিনা সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ ধান কিনা হচ্ছে তা চাল উৎপাদনের জন্য চালকলে পাঠানো হচ্ছে। মজুতবিরোধী অভিযানের ভয়ে বেশি করে ধান কিনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যদি মজুত করা সম্ভব হতো তাহলে ধানের দাম আরো ১০০-১৫০ টাকা বাজার বেড়ে যাবে।
নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন- কৃষকরা হাট-বাজারে যে ধান নিয়ে আসে, তাতে কিছুটা ভেঁজা, চিটা এবং ও ধুলা-বালি যুক্ত। ভেঁজা ধান কেনার পর শুকানো হলে ওজনে কমে যায়। আবার সংরক্ষণ করাও সম্ভব হয়না। সরকার মোটা ধান ১২৮০ টাকা মণ ঘোষণা করেছে। আমরা বাজার থেকে ধান কেনার পর দেখা যায় সরকারি মুল্যের কাছাকাছি চলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে কিনতে হয়। তবে সরকারি মুল্যে কেনা হলে পোশানো সম্ভব না। কারণ সরকারি গুদামে শুকনা ও ধুলা-বালি মুক্ত ধান দিতে হয়।
নওগাঁ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন- এ বছর জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যেখানে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৪৫ টন হিসেবে ফলন হচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন ভাল হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান বলেন- জেলায় ১৯ হাজার ২১৮ টন ধান, ৪৭ হাজার ৮১৫ টন সিদ্ধ চাল এবং ৪ হাজার ৬৫২ টন আতব চালের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সরকারি মুল্যে দাম পেয়ে কৃষকরা লাভবান হবে। তবে গুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষকরা যেনো কোনো ভাবে হয়রানি না হয়, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব নুরুল হক নয়ন
✆ ০৯৬৩৮-৯০৭৬৩৬। ই মেইল: thedailydrishyapat@gmail.com
।
Copyright 2025 Pratidinerdrishyapat